বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজসমূহের শিক্ষার্থীদের ওপর ১০০ কোটি টাকার করের বোঝা চাপিয়েছে সরকার!

1

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর ১০ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজেট পাশের আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত
প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। চলতি মাসের শুরুতে জারিকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে
মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে সকল প্রকার খরচের ওপর ১০ শতাংশ হারে মূসক প্রদান
করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে মূসকের কোনো বিধিবিধান ছিল না।
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ
থেকে মূসক কেটে নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, মাসিক বেতন-ভাতা, হোস্টেলের ভাড়া ও খাবারের খরচ থেকে প্রতি বছর
কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা কেটে রাখা হবে।
মেডিকেল কলেজের মালিকরা এ কথা অপকটে স্বীকার করে বলেন,
এমনিতে মেডিকেল কলেজের খরচ ওঠে না, তাই মূসক তো শিক্ষার্থীদেরকেই দিতে হবে।
বর্তমানে দেশের ৬২টি বেসরকারি মেডিকেল ও ১৮টি ডেন্টাল কলেজে সাত হাজারেরও বেশি
শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, আবাসন ও
আহারসহ সকল প্রকার খরচের ওপর এখন
থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ মূসক কেটে রাখবেন।
রাজধানীর বারডেম মেডিকেল কলেজের গভর্নিং বডির একজন সদস্যজানান, এনবিআরের প্রজ্ঞাপন
পেয়ে তারা ৪ জুন থেকে সকলখরচের ওপর মূসকের হিসেব রাখা শুরু করেছেন।
একাধিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করে
বলেছেন, এ ধরনের অযৌক্তিক করারোপের মাধ্যমে সরকার বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষাখাতকে ব্যবসায় পরিণত করছে।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটি বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, ভর্তি-ইচ্ছুক পর্যাপ্ত সংখ্যক সরকারি মেডিকেল
কলেজ স্থাপন করে সুযোগ করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব হলেও তারা দায়িত্ব পালনে চরমভাবে
ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে
উদ্যোগে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। মেডিকেল কলেজের নামে মূসক কাটা হলেও মূলত তা শিক্ষার্থীদেরকেই বহন
করতে হবে। ভর্তি ফি, হোস্টেল ভাড়া ও খাবার বাবদ
শিক্ষার্থীরা আগে যে টাকা দিতেন তার সঙ্গে শতকরা ১০ ভাগ টাকা যোগ হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। শুধু তাই নয়,
উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি চরমভাবে ব্যাহত হবে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) অর্থ সম্পাদক ইকরাম বিজু বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে এফবিসিসিআই-এর সদস্য হিসেবে তাদের মাধ্যমে প্রস্তাবটি বাতিল করার দাবি জানিয়ে ৮ জুন চিঠি দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল
কলেজের ভর্তির টিউশন ফি ১৫ laakh টাকার সিলিং বেঁধে দিয়েছে। এছাড়াও কলেজ ভেদে
শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের সিট বাবদ জনপ্রতি সাত হাজার থেকে আট হাজার ও খাবার খরচ বাবদ প্রতি
মাসে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি,
পরীক্ষার ফিসহ বিভিন্ন খাতে আরো টাকা আদায় করা হয়। বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল
কলেজে বর্তমানে আসন সংখ্যা সাত হাজারেরও বেশি। সাধারণ হিসেবে দেখা যায়, শুধুমাত্র
টিউশন ফি’র টাকার ১০ শতাংশ হারে প্রতি ছাত্রের মুসকের টাকার অংক দাঁড়ায় দেড় লাখ
টাকা। সাত হাজার শিক্ষার্থীর টাকা হিসাব করলে শুধুমাত্র টিউশন ফি’র মূসকের পরিমাণ ১০০ টাকা
টাকার বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মেডিকেল কলেজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান,
টিউশন ফি’র নির্ধারিত টাকা থেকে কলেজগুলোকে ১০ শতাংশ হারে আবশ্যিকভাবে মূসক দিতে হবে- এমন ব্যবস্থা নিলে শিক্ষার্থীদের এ করের বোঝা
বইতে হতো না বলে মন্তব্য করেন।

সংবাদ দাতা: জাহিদ হাসান

One thought on “বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজসমূহের শিক্ষার্থীদের ওপর ১০০ কোটি টাকার করের বোঝা চাপিয়েছে সরকার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের বিশতম ব্যাচের RAG DAY উদযাপিত

Sat Jun 13 , 2015
লসময় কেটে যায়। শুধু রয়ে যায় কিছু স্মৃতি। আমাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের স্মৃতি বিজারিত পাঁচটি বছর শেষ হয়ে গেল কত দ্রুত তা বুঝতেই পারিনি। আজ এগারোই জুন বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালিত হল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের RAG DAY. সকালে কেক কেটে অনুষ্ঠানের শুরু করেন অধ্যক্ষ ডাঃ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo