মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু বাসিত খান মুসাকে (৭) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মুসার চিকিৎসা হবে।
আজ মঙ্গলবার (২২অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই এর সহায়তায় দেয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের সাধারণ মানুষ মুসার চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছেন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে সংকটাপন্ন মুসাকে দেশে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা মুসা বারবার বিভিন্ন সংক্রমণের সংক্রমিত হয়। শরীর অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার পর দেশে পরবর্তী চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁরা মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে এত বিপুলসংখ্যক অর্থসহায়তা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেয় মুসার পরিবারের।
মুসা প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ও পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করেছিল জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর ‘আন্দোলনকালে গুলিবিদ্ধ শিশু মুসাকে সিঙ্গাপুরে নিতে বলছেন চিকিৎসকেরা, কে দেবে এত টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো। এই সংবাদ প্রকাশের পর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য বিনা মূল্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেয়। সরকার, প্রবাসী ও দেশবাসীও সহায়তা দিয়ে তার পাশে দাঁড়ায়।
জানা গেছে, মুস্তাফিজুর রহমান ও নিশামনি দম্পতির একমাত্র সন্তান বাসিত খান মুসা। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় মেরাদিয়া হাট এলাকায় নিজ বাসার নিচে মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে নেমে দাদি মায়া ইসলাম (৬০) ও মুসা (৭) গুলিবিদ্ধ হয়। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। আর মাথায় বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় সংকটাপন্ন মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত ২৬ আগস্ট সংকটাপন্ন মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচের নিউরোসার্জারী বিভাগে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) স্থানান্তর করা হয়। পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগে। সিএমএইচে মুসা মূলত জ্যেষ্ঠ নিউরোসার্জন অধ্যাপক কর্নেল মো. আল আমিন সালেক এবং পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁরা মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেন।
প্রথম আলোর বরাতে জানা যায় অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ বলেছেন, “আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সিএমএইচ থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে শিশু মুসাকে নিয়ে রওনা হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকের যে দলটি মুসার চিকিৎসা করবে, তাঁদের একজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে এসেছেন। তাঁকে মুসার চিকিৎসার সব কাগজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় আনুমানিক ৫০ দিনের জন্য চিকিৎসা হবে। মুসার সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।” তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা মুসার বিষয়ে খুবই আগ্রহী। তাঁরা এ পর্যন্ত মুসা কী কী চিকিৎসা পেয়েছে, তার খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছেন।” মুসার চিকিৎসার বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসক ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মুসার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন মুসার মা নিশামনি একইসাথে দুঃসময়ে আর্থিক ও মানসিক সহায়তা করায় তিনি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী