সেদিন আমাদের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এক যুবক বয়সী লোক এসেছিলেন। সমস্যা – কাশি। কাশির ধরন আর ডিউরেশন শুনে উনাকে একটা বুকের এক্সরে আর কফ পরীক্ষা করতে দেই। কফ পরীক্ষা করাতে চাইলেও উনি এক্সরে করাতে রাজি হন নাই। কারন হিসেবে জানালেন, পত্রিকায় উনি দেখেছেন বিশ বারের বেশি এক্সরে করালে নাকি শরীরে ক্যান্সার হয়। ইতোমধ্যে উনি ছোটবেলায় দুবার পায়ের এক্সরে করেছেন। তাই আর এক্সরে করাবেন না। করলেও আরো বেশি বয়সে বিশেষ বিবেচনায় করাবেন। ঘটনা শুনে হাসলাম। এরকম উদ্ভট তথ্য পত্রিকায় পরিবেশন করে হুজুগে বাংগালীকে আরো হুজুগ তৈরীর সুযোগ দেয় আমাদের সাংবাদিক নামক কিছু অর্ধমূর্খ। লোকজনও পত্রিকায় যা পায় ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে সে নিয়ে দুটো বাক্য বলে নিজেদের উস্তাদ বানাতে চায়। সচেতন হওয়া ভাল তবে অল্পবিদ্যা আরো ভয়ানক।
যাহোক, লোকটির স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখে ধন্যবাদ দিলাম এবং বুঝিয়ে বললাম এক্সরে কখন সমস্যার কারন হয়, আর কোন কোন অংগে সেনসিটিভ বেশি। পত্রিকার সব তথ্যই ঠিক নয় এবং যাচাই না করে সেটা প্রয়োগ করতে যাওয়াও উচিত নয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে সে এক্সরে করাতে রাজি হয়েছিল। এক্সরে ডায়াগনোসিস যক্ষ্মার জন্য সাজেস্টিভ ছিল, পরদিন কফ রিপোর্ট সেটাই কনফার্ম করলো। এখন এন্টিটিবি ড্রাগ পাচ্ছে। যদি পরীক্ষা করানো না হতো তবে ক্ষতিটা রোগীরই ছিল। তাই তাকে এটাও বলে দিলাম যে, রোগের প্রগ্রেস ফলোআপ করার জন্য আপনাকে আরো কয়েকদফা এক্সরে করা লাগতে পারে, সেজন্য ঘাবড়ানোর কিছু নেই। রোগী মোটামুটি আসস্ত হয়ে বিদায় নিল।
গত ১৬ আগস্টের প্রায় সবকটি পত্রিকাতেই এসেছে “নাপা-এইস’সহ ৫১ টি ঔষধ নিষিদ্ধ”!
এই শিরোনামকে আমি বলবো ভয়ংকর একটি শিরোনাম এবং বাংলাদেশের ডাক্তারদের থেকে আস্থা কেড়ে নেবার মত একটি রিপোর্ট। সাংবাদিক মহাশয় শুধুমাত্র উপরের অংশই দেখেন। ভিতরে তাকানোর সুযোগ উনার হয়নি। কারন নিষিদ্ধ ঔষধের তালিকায় প্যারাসিটামল নাই, আছে প্যারাসিটামল এর সাথে ডিএল-মিথিওনিন এর কম্বিনেশন। যেমন: : নাপা-সফট, প্যারাডট এসব কম্বিনেশন ড্রাগ। এখন কোন ডাক্তার যদি প্যারাসিটামল (নাপা. এইস বা এক্সপা) তাহলে রোগী প্রতিবাদ করে উঠবে। যতই বুঝানো হোক না কেন, উনারা পত্রিকার রেফারেন্স দিয়েই ডাক্তারকে শিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারের বিদ্যা নিয়ে বিশাল ছবক দেবেন। টু বি ফ্র্যাঙ্ক আমি ডাক্তার না হলে তাইই হয়তো করতাম। কারন নিষিদ্ধ ঔষধ দিয়ে ডাক্তার আমাকে মারতে চাইছে এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না!! পত্রিকায় যা বলে সেটা বিশ্বাস হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সকল সাংবাদিক ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে তাই বলছি, আপনাদের উচিত হবে মেডিকেল রিলেটেড রিপোর্ট করার আগে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে নেয়া। অন্তত সঠিক তথ্যটি যাচাই করার সুযোগ পাবেন। যেহেতু পত্রিকার মাধ্যমে দেশের লোকজন জানছে তাই একটি ভুল তথ্য অনেক ভুল বুঝাবুঝির জন্ম দেবে। শিরোনাম দেখেই অনেকে আতকে উঠে, ভেতরের খবর দেখার প্রয়োজন মনে করে না। তাই শিরোনাম করার ক্ষেত্রেও একটু সাবধান হওয়া ভাল। না হলে অল্প বিদ্যায় জনগনের অতি সচেতনতার কারনে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। এতে আস্থা হারাবে চিকিৎসকের উপর থেকে।
লিখেছেন: সুমন সাজ্জাদ
পরিমার্জনা: বনফুল
আমরা যারা পত্রিকাতে লিখি তাদের ও খেয়াল করা উচিৎ রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে লেখা থেকে রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে লেখা দরকার।