বুধবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৪
ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাটে অবস্থিত এলএলআরএম মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মানিশের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে মেডিকেল কলেজের সকল আবাসিক চিকিৎসক গণ পদত্যাগ করেছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের স্থানীয় পত্রিকার বরাতে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রোজ সোমবার মিরাটের এলএলআরএম মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসকের উপর হামলা করা হয়। প্রতিবাদে গত ০১ অক্টোবর, কলেজের আবাসিক চিকিৎসকদের সংগঠন ‘রেসিডেন্ট ডক্টরস এসোসিয়েশন’ এর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিরাপদ কর্ম পরিবেশের দাবিতে সকল আবাসিক চিকিৎসক গণ পদত্যাগ করার পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসাসেবা সহ সকল ধরনের চিকিৎসা সেবায় শাট ডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রদেশের অনেক চিকিৎসকই এদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। ডা. ধ্রুব চৌহান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন – “এটা বিশাল প্রতিবাদ! ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, এলএলআরএম মেডিকেল কলেজের সকল আবাসিক চিকিৎসক সরকারি নিরাপত্তা প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত গণ পদত্যাগ করেছেন। সকল ধরনের জরুরি ও নির্বাচিত সেবা প্রদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গে আর. জি. কর. মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ৯ আগষ্ট চিকিৎসক মৌমিতা ধর ধর্ষণ ও সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ এর তত্ত্বাবধানে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। গতকাল থেকে রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আজ ০২ অক্টোবর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ এর পক্ষ থেকে মহাসমাবেশেরও ডাক দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের দাবির মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা, অপরাধীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা, মেডিকেল কলেজগুলোর দুর্নীতির তদন্ত করা।
আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, “এই আন্দোলনের কোনও আলাদা মুখ নেই। মানুষই মুখ। এটা গণ-আন্দোলন। শুধু হাসপাতালে নয়, সমাজের আর কোথাও যাতে একজন চিকিৎসককেও নির্যাতিত না হতে হয়, একজন মহিলাকেও ধর্ষিতা না হতে হয়, তার জন্যই আমাদের লড়াই। সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ এই লড়াইতে সামিল হয়েছেন। যতদিন সমগ্র ভারতে চিকিৎসক নির্যাতন বন্ধ না হচ্ছে ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
এসএসকেএমএইচ (শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতাল)-এর পরিচালক মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা যে কোন হাসপাতালে ঘটে, তা কল্পনাও করা যায় না। এর সঙ্গে যাঁরা সরাসরি এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত, তাঁদের সকলকে চিহ্নিত করা হোক।”
সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, শুধু ভারতেই না; একই সাথে নেপাল,বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও চিকিৎসক হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী