প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ অক্টোবর ২০২০, শনিবার
ডা. ইমরুল হাসান ওয়ার্সী
পুরস্কার আমি আগেও পেয়েছি পরেও পেয়েছি তবে ৬ বছর আগের আজকের দিনে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ISBI কনফারেন্সটি বিভিন্ন কারণে আমার কাছে স্মরণীয়। আমি একটা রিসার্চ পেপার সাবমিট করি। তবে ভুল বসত সেটা সাবমিট করি একটা প্রাইজ ক্যাটাগরিতে। পরদিন আরো কিছু ডকুমেন্ট চেয়ে একটা মেইল করে কন্সফারেন্স কমিটি। মেইলে বলা হয় ২ দফা বাছাই প্রক্রিয়া শেষে ৮ জনকে মূল পর্বে প্রতিযোগিতার জন্য ডাকা হবে।এদিকে কনফারেন্স এর সপ্তাহ খানিক আগে জুরী বোর্ডের একজন সদস্য ইসরাইলের নামকরা প্লাস্টিক সার্জন প্রফেসর লিওর রোজেনবার্গ আমাকে একটা মেইল করে জানতে চাইলেন আমার রিসার্চ ওয়ার্কটা আরো বিস্তৃত করে, দের ঘন্টার একটা লেকচার বানাতে পারবো কিনা। তিনি চাচ্ছেন ‘বার্ন ম্যানেজমেন্ট ইন থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি’ নামে একটা সিম্পোজিয়ামে আমাকে কি নোট স্পিকার করতে। আমি রাজি আছি কিনা দ্রুত জানাতে হবে। আমার তো ভাবতে ১ মুহুর্তও দেরী হবার কথা না। এতো বড় ফোরামে আমেরিকান আর ইসরাইলের ২ জন প্রফেসরের সাথে ডায়াসে বসার সুযোগ। লিয়োর আমাকে এই বলে সাহস দিলেন যে প্রয়োজনে তিনি আমাকে লেকচার প্রিপারেশনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
এরই মধ্যে প্রাইজ ক্যাটাগরিতে আমার রিসার্চ পেপারটি শেষ আটে টিকে যাওয়ায় আরেকটি মেইল পাই। তারা আমাকে কনগ্রাচুলেট করে প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করে। আমি খুশিমনে কাজ গুছিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রেডি করলাম। আমি যেদিন ফ্লাই করবো সেদিন কনফারেন্স শিডিউল দেখে হতাস হয়ে গেলাম। প্রাইজ ক্যাটাগরির ৮ জনের মধ্যে আমার নাম নাই। আমি সাথে সাথে আগের শিডিউল আর আপডেটেড সিডিউল এটাচমেন্টে দিয়ে একটা আবেগময় মেইল করলাম সংস্থার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের কাছে। আমি লিখলাম তোমার রেসপন্স না পেলে আমি প্লেনে চড়বো না। আমেরিকান এই মহিলা অজ্ঞাত কারণে আমাকে বিশেষ পছন্দ করেন। অনেকদিন থেকেই বিভিন্ন কনফারেন্সে আমার যাবার ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা থেকে স্পন্সর তিনি কালেক্ট করে দেন। আমার লেকচারে নিজে উপস্থিত থাকেন। তিনি আপডেটেড শিডিউল দেখে ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন আর আমাকে সান্তনা দিয়ে বললেন তুমি প্রাইজ ক্যাটাগরিতে লেকচার দিচ্ছো এটা আমি নিশ্চিত করবো। সেই সাথে বললেন অস্ট্রেলিয়ায় তার অস্থায়ী সেক্রেটারিয়েটে তাকে যেন মনে করিয়ে দেই। সেই মুহুর্তে তিনি অস্ট্রেলিয়া যাবার পথে কোন এক এয়ারপোর্টে কানেকটিং ফ্লাইটের অপেক্ষারত ছিলেন। আমি অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে তার সাথে দেখা করলাম। তিনি আমাকে নতুন লিস্ট দেখিয়ে বললেন এই লিস্টে তুমি ১ নম্বর বক্তা। কিভাবে যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলো আমি বুঝতে পারছিনা তবে, যেই তোমাকে বাদ দিয়ে থাকুক তুমিই তাকে জবাব দিতে পারো প্রাইজটা জিতে নিয়ে। এরপরে প্রাইজটা হাতে নিয়ে আবারো দেখা করতে গিয়েছিলাম এলিজাবেথ গ্রিনফিল্ড এর সেক্রেটারিয়েটে। যে সিম্পোজিয়ামে আমি কি নোট স্পিকার ছিলাম সেখানে শেষ বক্তা হিসেবে লেকচার দিচ্ছিলেন প্রফেসর রোজেনবার্গ। তাঁর শেষের কয়েকটা স্লাইড তৈরি করেছিলেন তাঁর সাথে আমার ইমেইল করোস্পন্ডেন্স এর স্ক্রিনশট দিয়ে। যেখানে আমি তৃতীয় বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রিসোর্স ডিস্ট্রিবিউশন কেমন হওয়া উচিৎ সেই ভাবনা টা তুলে ধরেছিলাম। তিনি সবাইকে মনে করিয়ে শেষ করেছিলেন এই বলে যে এই প্রস্তাবনা আমার মুখ থেকে শুনলেও, এসেছে বাংলাদেশের ডা. ওয়ার্সীর মাথা থেকে।
এই কনফারেন্সেই আমি চাইনিজ এবং স্পেনিশ বা পর্তুগীজ ভাষায় আমার দুইটি নতুন নাম পাই। বেশ কিছু প্রফেশনাল বন্ধু পাই যারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে এনরিচ করে যাচ্ছে এখনো। এই কনফারেন্সের পুরস্কার বিতরণীর পরে আই এস বি আই এর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিজে আমাকে অভিনন্দিত করেন এই বলে যে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র সদস্য হিসেবে এসেই পুরস্কার জিতে নিয়েছো। মানে দেশের জন্য ১০০% সফলতা।