প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৫ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার
বাংলাদেশে করোনার শুরু থেকে অদ্যাবদি করোনা রোগীদের সেবা ও সুস্থ থাকার দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ। এর মধ্যে তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবুও থেমে নেই তাঁর সেবা। পাঁচ হাজারের বেশি করোনা রোগী দেখেছেন তিনি। বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনিদের্শনায় যাদের বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়েছেন। করোনার ভ্যাকসিন আসার পরও ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবিএম আবদুল্লাহ।
তিনি করোনার শুরু থেকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপচারিতায় নানা বিষয় তুলে ধরেন। কেউ কেউ করোনা পরবর্তীতে বিভিন্ন উপসর্গে ভুগছেন বলেও জানা যায়। তবে ডাক্তাররা অভিজ্ঞতার আলোকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি ডাক্তারকেই করোনা রোগী সামলাতে হচ্ছে, চেম্বারেও ভিড় লেগেই থাকছে। প্রতিনিয়ত হাসিমুখে সেবা দিচ্ছেন করোনা যোদ্ধা ডাক্তাররা।
করোনার শুরুর দিকে মানুষের মধ্যে ভয় ছিল বেশি, যা এখন অনেকটাই নেই। আবার করোনা পরবর্তীতে কিছু কিছু রোগীর নানা সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। করোনা নিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, “আমি পাঁচ হাজারের বেশি করোনা রোগী দেখেছি যাদের বেশির ভাগই এখন সুস্থ হয়েছেন। তবে কারও কারও করোনা পরবর্তীতেও নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে যদিও সে সংখ্যা কম।” জানা গেছে, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে প্রায় দুই মাস বা আরও বেশি সময় পর করোনা পরবর্তী বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। কারো শরীর ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, হাড় ব্যথা, দীর্ঘ সময় এক স্থানে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে শরীর অনেকটা অবশ হয়ে যাওয়া মাথা ব্যথা বেড়ে যাওয়া, এমনকি স্মৃতিশক্তিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানা যায়। অনেকেই এসব সমস্যা নিয়েও ডাক্তারদের কাছে প্রতিনিয়তই ছুটছেন বলেও জানা গেছে। করোনা নিয়ে আলাপচারিতায় ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “নতুন একটি রোগ যার চিকিৎসাও ছিল অজানা। আমার করোনা চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও হয়েছে। শুরু থেকে ভয় ভিতি ছিল কাছে যাওয়া যেত না, সেটা কেটে গেছে। সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছি, রোগী ভাল হচ্ছে। আমার দক্ষতা বাড়ছে, মানুষের সাহস বাড়ছে, চিকিৎিসকদের সাহস বেড়েছে এটাও অভিজ্ঞতা।” চিকিৎসা নিয়ে তিনি আরও বলেন, “সবদিক বিবেচনা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাল হলেও পরবর্তীতে কোন কোন সমস্যা নিয়েও রোগীরা আসছেন। আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা কেউ কেউ মারাও গেছেন। তবে যারা মারা গেছেন তারা শুরুতেই খারাপ পরিস্থিতি নিয়েই এসেছেন। ওয়ার্ডে আসার আগেই আইসিউতে ভর্তি করতে হয়েছে এমন রোগীও এসেছে। তবে বেশিরভাগই ভাল হয়েছে আমার রোগীদের মধ্যে। আইসিইউ থেকেও ফেরত আসা অনেক রোগী ভাল হয়েছে।”
এখনও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগী ছুটছেন বিভিন্ন ডাক্তাদের কাছে। হাসিমুখে সেবা দিচ্ছেন ডাক্তাররাও। অজানা এই রোগ নিয়ে আগের চেয়ে এখন ভয় একেবারেই নেই। ফলে আগের চেয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারদের কাছেও সেবার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে দীর্ঘদিন রোগটির বিষয়ে ডাক্তারদের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও জানা গেছে। চিকিৎসা পেশায় অনন্য অবদানের জন্য একুশে পদক পাওয়া ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ভ্যাকসিন নিয়ে বলেন, “ভ্যাকসিন এসেছে এবং কতটুকু কার্যকর হবে তা সঠিক জানি না। তবে আমাদের সুরক্ষিত থাকতে হবে এই ভাইরাস থেকে।” আর এই মুহূর্তে জরুরী তিনটি কাজের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে তিনটি উপায় বলতে গিয়ে বলেন, “প্রথমটি হলো মাস্ক পরা, দ্বিতীয়টি হাতধোয়া বা স্যানিটাইজার চর্চা চালু রাখা এবং তৃতীয়টি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। এই তিনটি কাজ ভ্যাকসিনের পরিপূরক বা অল্টারনেটিভ হিসেবেও রাখতে পারেন বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক এই ডিন বলেন, “ভ্যাকসিন এলেও এগুলো অর্থাৎ তিনটি কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ভ্যাকসিন আসলেও নিশ্চিত নয় যে আপনাকে শতভাগ প্রটেকশন দিবে। সুতরাং তিনটি কাজ ভ্যাকসিনের আগেও চালু রাখতে হবে এলে পরেও চালু রাখতে হবে।” ভ্যাকসিন নিয়ে বলেন, “আমরা বিভিন্নভাবে ভ্যাকসিন বিষয়ে জানছি, তবে আসলেই বুঝা যাবে আসলে কয়টি ডোজ লাগবে।”
এদিকে শীতকাল আসাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা করা হচ্ছে। যা আগের চেয়ে সংক্রমণে মাত্রা আরও বেশি বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় সংক্রমণ বেশি হলে সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। করোনা শুরু থেকে যে ভয় ছিল তা কেটে যাওয়াতে দ্বিতীয় ঢেউ আসলেও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোক সামাল দিতে পারবেন বলে মনে করেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, “আমাদের ডাক্তার নার্স আমাদের যারা স্বাস্থ্যকর্মী তারা যথেষ্ট দক্ষ, তাদের অভিজ্ঞতা আছে, ভালভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে, আগের মতো ভয় পান না। রোগীকে ভাল সেবা দিতে পারছেন। আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা বাড়ছে, আমার মনে হয় যথেষ্ট দক্ষ এখন ডাক্তাররা। ওষুধপত্র নিয়ে কিছু হয়তো মতভেদ আছে, সুনির্দিষ্ট কোন ওষুধ তো নেই। যে ওষুধগুলো দেয়া হয় সারা পৃথিবীতে আমারও তাই দেই যেহেতু ওষুধ আমাদের দেশে সহজলভ্য। সহজভাবে চিকিৎসা করতে পারছি। অন্য কাজগুলো মন্ত্রণালয় প্রশাসনিক ব্যাপার তারা তাদের যতটুকু পারছে করছে। তবে তুলনামূলক আগের চেয়ে অবস্থা ভাল। তবে সামনের দিকে বেশি হয়েই যায়, তাহলে যেসব হাসপাতাল বন্ধ হয়েছে তা আবার চালু করতে হবে। জনগণের মধ্যেও সাহস বেড়েছে, ভীতি কেটে গেছে। জীবন জীবিকার জন্য করোনাকে কেউ এখন অনেকে পরোয়াই করেনা। আমার অনুরোধ আপনারা স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলবেন। ঢিলেঢালা, গা ছাড়া ভাবটা যেন না থাকে এটা জনগণের জন্য জরুরী। শুরুতে করোনা ছিল নতুন রোগ আমরা জনাতাম না এখন জানা যাচ্ছে, এখন চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে। এখন রোগ বিষয়ে ধরতে পারছি। সুতরাং করোনা শুরু থেকে যে ভয় ছিল তা কেটে যাওয়াতে দ্বিতীয় ঢেউ আসলেও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সামাল দিতে পারব।”