ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য কালার কোডেড ঔষধের কৌটা

ব্যস্ততা কিংবা অন্যমনস্কতা, কারণ যাই হোক, ওষুধ খেতে মাঝেমধ্যে ভুলে যান- এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কোন বেলায় ঠিক কোন কোন ওষুধ খেতে হবে, মনে থাকেনা অনেকেরই।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যাটা যেন হয় একটু বেশিই। ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিয়ে আসেন না অনেকেই, বা আনলেও হাসপাতালের সীমিত পরিসরে স্থান সংকুলান হয়না সেসবের। এখানে সেখানে ফেলে রাখেন অতি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, স্বভাবতই দরকারে খুঁজে ফেরেন হন্যে হয়ে। উপরন্তু যোগ হয় সকালে এই ওষুধ, বিকেলে ওই ওষুধ- মনে রাখার ঝক্কি।

বিশেষত গ্রামাঞ্চল থেকে রোগীর সাথে আসা অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মানুষগুলো বিপাকে পড়েন বেশি। কোন ওষুধ রোগীকে কখন খাওয়াতে হবে, প্রায়শই মনে রাখতে পারেন না তারা। কিছুক্ষণ পর পরই ছুটে আসেন কর্তব্যরত চিকিৎসক/নার্সদের কাছে, জানতে চান কখন কোন ওষুধটা খাওয়াবেন?

ব্যস্ততার দরুন চিকিৎসকদের পক্ষেও সর্বদা রোগী বা রোগীর স্বজনদের যত্ন করে, প্রতি বেলায় দেখিয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয়না যে এই ওষুধগুলো সকালে খাবেন, এগুলো খাবেন দুপুরে, আর এগুলো রাতে। ফলশ্রুতিতে এ বেলার ওষুধ অনেকে খেয়ে নেন ও বেলায়, ভুলবশত ঘটে নিদারুণ বিপত্তি।

এই ছোট্ট ভুলের ঝুঁকি থেকে রোগীদের মুক্তি দিতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবার তাই গ্রহণ করেছেন এক অভাবনীয় উদ্যোগ।
দিন কয়েক আগে হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৩টি করে কৌটো।
লাল, নীল, সবুজ রঙয়ের কৌটোগুলায় সুন্দর করে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘সকালের ঔষধ, দুপুরের ঔষধ, রাতের ঔষধ’।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীর স্বজনদের এবার থেকে আর কোন বেলায় কোন ওষুধ- মনে রেখে রেখে ঝক্কি পোহাতে হবে না।
মনে রাখবার এবার আর ভাবনা নেই। কোন বেলায় ভুলক্রমে কোন ওষুধ বাদ পড়ে যাবারও ভয় নেই। নিয়ম মেনে সঠিকভাবে পথ্য গ্রহণে রোগীদের উৎসাহিত করতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত এই চমৎকার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।

৩টি রঙ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে। সবুজ, নীল ও লাল রঙ হলো মৌলিক রঙ। এগুলো মৌলিক রঙ হবার কারণ হলো, স্বাভাবিক মানুষের চোখে এই ৩টি রঙ দেখার জন্য ৩ ধরনের উপাদান রয়েছে (photopsin)। অন্যান্য রঙ দেখার অনুভূতি তৈরি হয় এই ৩ ধরনের উপাদানের বিভিন্ন মাত্রার সক্রিয়তায়।

কারো যদি রঙ দেখার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা থাকে, (colour blind) ৩ রঙ না দেখে তিনি ৩টি রঙই একই রঙ বা দুটি রঙ হিসেবে দেখছেন, সেটা ধরা পড়বে।

তাই, আপাতদৃষ্টিতে যা অভিনব মনে হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়েও বেশি কিছু। বিজ্ঞানসম্মত ভাবনার সঠিক প্রয়োগের এই উদাহরণ অনুকরণীয়। দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতি প্রয়োগে সফল হবেন বলে আশা করা যায়।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ
ডা. সুমাইয়া তাবাসসুম
সেশনঃ ২০১২-১৩
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।

ফিচার লেখিকাঃ
ডা. মিত্রবৃন্দা চৌধুরী
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

তৃতীয় নয়ন | ছোটগল্প

Wed Sep 25 , 2019
আমি অবাক হইনা আর। হয়তো দেখতে দেখতে সহ্য হয়ে গেছে। এই হাসপাতালটাকে দেখছি আমি জন্ম থেকেই। এখানেই থাকি যে, যাবার উপায় নেই। তাই অভিজ্ঞতা গুলো মিলে মিশে বিলীন আমার মাঝে।কখনো আনন্দের,কখনো কষ্টের। মৃত্যু দেখলে আমি চোখ ফিরিয়ে নেই। পারি না, দেখে যেতে হয়। মাঝে মাঝে পালাতে ইচ্ছে করে। মায়ায় আটকে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo