মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি মহাসচিব , ডা. হুমায়ূন কবীর বুলবুল।
কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্বে শিকারদের সিংহভাগকেই কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন মরণোত্তর চক্ষু দান। অন্ধের চোখে আলো ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি, সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকসহ কিছু বেসরকারী সংগঠন। এদের সবার লক্ষ্য চক্ষুব্যাংক শক্তিশালী করন প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক কর্নিয়ার চাহিদার বিপরীতে এর মাধ্যমে হাসপাতালে কর্নিয়া সংগ্রহের হার বাড়ানো।
চোখদানের ক্ষেত্রে কোন ধর্মেই কোনোরুপ বাধা নেই। মক্কাভিত্তিক ইসলামী ফিকাহ্ একাডেমী বলেছে – ” মরণোত্তর অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ বা সংস্থাপন শরীয়ত বিরোধী নয়। “।
মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী পন্ডিত গন ১৯৬৫ সালে এই মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, যেহেতু ইসলাম মানবসেবাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেহেতু মানুষের কল্যানে মরণোত্তর চক্ষুদান কোন ক্রমেই ইসলাম বিরোধী হতে পারে না। বরং ইসলামে একে উৎসাহিত করা হয়েছে। সিরিয়া,মিশর, মরক্কো, তিউনিশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে বিশেষতঃ আলেমগনের অংশগ্রহণে চক্ষুদানের মহত ধারা ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। ও আই সি (OIC) মরণোত্তর চক্ষুদানকে অনুমোদন দিয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে চোখদানের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। খৃষ্টান ধর্মে বা হিন্দুধর্মেও চোখদানের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্ধত্বমোচন (মরণোত্তর চক্ষুদান) অর্ডিন্যান্স ১৯৭২ এর আলোক বিবৃতিঃ-
(ক) মরণোত্তর চক্ষুদানে দাতার কোন বয়সসীমা নেই।
(খ) অঙ্গীকারপত্র পূরণ করার কোন বয়সসীমা নেই।
(গ) মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকারপত্র পূরণ করতে অভিভাবক কিংবা পরিবারের যে কোন দুইজন সদস্যের নিকটস্থ সন্ধানী চক্ষুব্যাংক কিংবা হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে খবর দিতে পারেন।
(ঘ) অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী যে কোন ব্যক্তি পরিবারের দুইজন স্বাক্ষী ও দুইজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে মরণোত্তর চক্ষুদান করতে পারেন।
(ঙ) মরণোত্তর চক্ষুদাতার মৃত্যুপূর্ব যে কোন শর্ত দাতার আত্নার মাগফেরাত কামনায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে সন্ধানী সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে।
এ শর্ত (ঙ) প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে — সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর এ.কিউ.এম. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মরণোত্তর চক্ষুদান অঙ্গীকারপত্র পূরণ করে শর্ত দিয়েছেন যে, তাহার চোখ সংগ্রহ করবার পর যেন চক্ষুকোটরে ঠিক চোখের মত একটি প্লাস্টিকের বল বসিয়ে দেয়া হয়।
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক জনাব হুমায়ুন আহমেদও একটি শর্ত আরোপ করেছেন। তিনি অঙ্গীকারপত্রে বলেছেন – তাঁহার চোখ এমন একজন যুবককে দিতে হবে যাহার প্রেমিকা আছে এবং চোখ খুলে প্রথমেই সে যেন তাহার প্রেমিকাকেই দেখবে।