মস্তিস্কের ৩য় ভেন্ট্রিকুলার টিউমার এর জটিল অপারেশনে সফলতা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

৫ বছরের ফুটফুটে মেয়ে মালিহা (ছদ্ম নাম)। হঠাৎ করেই খাওয়া- দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, মাথা ব্যথা স্কুলে যাওয়া বন্ধ। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু ডাক্তারের কাছে এবং মাথা ব্যথার ঔষধ দেওয়া হয়। কিন্তু সুস্থ হওয়ার বিপরীতে মালিহা আরোও দূর্বল হতে থাকে, সাথে বমি হয় আর খেতে পারে না কিছুই। তখন রোগীর এম আর আই করে দেখা যায় ব্রেন টিউমার হয়েছে। আর টিউমার এর লক্ষণ হওয়ার দুই- তিন সপ্তাহ পরে নিউরোসার্জন এর কাছে আসলে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকার ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মালিহার জটিল ৩য় ভেন্ট্রিকুলার ব্রেন টিউমার অপারেশন করা হয়। এ অপারেশনের চীফ সার্জন ছিলেন, ডা. মো: ইসমে আজম জিকো, এ্যানেস্থেশিয়া দিয়েছেন ডা. ফরহাদ রেজা। দীর্ঘ ৬ ঘন্টার সফল অপারেশনটি করা হয় অত্যাধুনিক ক্রেনিওটোম মেশিন ও মাইক্রোস্কপের সহায়তায়।

অপারেশনের চীফ সার্জন ডা. মো: ইসমে আজম জিকো বলেন, বাংলাদেশে এখন সফলতার সাথে অনেক জটিল জটিল ব্রেন টিউমার অপারেশন হচ্ছে। এই অপারেশনটি তার মধ্যে অন্যতম।


অপারেশনের পর হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টের ভিন্নতা দেখে সন্দেহবশত, হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্ট আর পোস্টঅপারেটিভ স্ক্যান নিয়ে রোগী ভারতের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞর শরণাপন্ন হয়। তিনি বলেন,

সাধারণত এই ধরনের জটিল যায়গার টিউমার অপারেশন করলে রোগীর কিছু নিউরো ডেফিসিট হয়। কিন্তু আপনার বাচ্চার কোন ডেফিসিট হয় নি। কে অপারেশন করছে? বাংলাদেশে! বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্লিওমা অপারেশনে সম্পূর্ণ টিউমার সবসময় আনা যায় না, আনলে রোগীর ক্ষতি হয়, কিন্তু আপনার মেয়ের সম্পূর্ণ টিউমার এসেছে কোন ক্ষতি ছাড়াই”।

ব্রেন টিউমার সম্পর্কে ডা. মো: ইসমে আজম জিকো এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সানন্দে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে সার্জারি ছাড়া ভালো হওয়ার আর কোনো উপায় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, কিছু কিছু টিউমার মেডিসিন এর মাধ্যমে ভালো হয়। যেমন- প্রোল্যাক্টিনোমা আবার থেরাপিতেও কিছু টিউমার ভালো হয়”।  টিউমার হলে কখন অপারেশন করতে হবে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “যদি টিউমার বিনাইন হয় তাহলে লক্ষণ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় বা ফলোআপে রাখা যায় এবং লক্ষণ আসার সাথে সাথে অপারেশন করতে হয়, আবার যদি এম আর আই রিপোর্ট দেখে ক্যান্সারের মতো মনে হয় তাহলে টিউমার ধরা পরার সাথে সাথে অপারেশন করতে হয়”।

সাধারণ মানুষের মনে ব্রেন টিউমার অপারেশন নিয়ে অনেক ভীতি কাজ করে। ব্রেইন টিউমার অপারেশনের পরবর্তীতে কি বিশেষ কোনো জটিলটা দেখা যায়?

সাধারণ মানুষ ব্রেন টিউমার নিয়ে খুবই আতংকগ্রস্থ থাকে আর এর অনেকগুলো কারণও রয়েছে। যেমন: ব্রেন টিউমার হলেই জীবন শেষ এই ভ্রান্ত ধারণা। ব্রেন টিউমার নিয়ে সিনেমা নাটকেও খুব ভয় দেখানো হয়। মাইক্রোস্কোপ আসার আগে এবং নিউরো এ্যানেস্থেশিয়া ডেভেলপ করার আগে ব্রেনটি টিউমার সার্জারীর মৃত্যুহার বেশি ছিল এটাও একটা কারণ। কেননা, যখন মাইক্রোস্কোপ, ক্রেনিওটমি ছিলো না, নিউরোএ্যানেস্থেশিয়ার ঘাটতি ছিলো তখন অনেক সমস্যা হতো কিন্তু এখন কমে এসেছে। তবুও, যেগুলো কমন কমপ্লিকেশন সেগুলো হলো, রক্তক্ষরণজনিত, খিঁচুনি, জ্ঞানের মাত্রা কমে আসা, হাত পার শক্তি কমে আসা, এ্যানেস্থেশিয়াজনিত জটিলতা ও অন্যান্য।

ব্রেনের বিভিন্ন সার্জারি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন কেমন কাজ করছে?
বাংলাদেশ ব্রেন টিউমার সার্জারীতে এখন বিশ্বের সমপর্যায়ে। উন্নত বিশ্ব যেসব ফ্যাসিলিটি নিয়ে অপারেশন করে আমরা ও সেসব ফ্যসিলিটি নিয়ে অপারেশন করছি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে। যেমনঃ
১. Intra operative nerve monitoring
২. Neuronavigation
৩. World standard microscope
৪. ICG for microvascular neurosurgery
৫. Intraoperative Doppler
৬. Endoscopic skull base surgery
৭. endoscopic intraventricular surgery
৮. Intraoperative ECOG

আমরা যখন বহির্বিশ্বে আমাদের পেপারস প্রেজেন্ট করি, আমরা দেখতে পাই প্রায় সর্বত্রই আমরা উন্নত বিশ্বের সম- পর্যায়ের ব্রেন টিউমার সার্জারি করছি।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ডা. শুভাগত চৌধুরীর স্বাস্থ্যবার্তা: করোনায় দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক কাজগুলো জেনে নিন

Tue Sep 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী পুষ্টিকর আহার আর শরীর চর্চা, পর্যাপ্ত নিদ্রা দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক। ঘরে রান্না করুন। ঘরের কাজ করুন। সবজি চাষ করুন ছাদে, ব্যালকনিতে; হাঁটুন ঘরে, আঙ্গিনায়। নানা রঙের ফল আর সবজি খান। খাবেন মৌসুমি ফল। আমিষ খাবেন, উদ্ভিজ্জ আর প্রানিজ। ডিম […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo