প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ জুুন ২০২০, সোমবার
কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের মাত্রা ও বিস্তৃতি অনুসারে লাল, হলুদ এবং সবুজ এই তিনটি রং এর অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করে জোনভিত্তিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এই তিন রং এ চিহ্নিত করার বিষয়টি নির্ভর করবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার উপর। যেমন- ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ তাই এই অঞ্চলটি হতে পারে লাল রং চিহ্নিত অঞ্চল যেখানে করোনা সংশ্লিষ্ট কঠোর জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অন্য যে সকল অঞ্চলে সংক্রমণ তুলনামূলক কম সেগুলোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ বা সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হতে পারে। লাল অঞ্চল থেকে হলুদ অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হবে এবং সেখানে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বাড়ি বা তার চারপাশে লকডাউন কার্যকর করা হবে। সবুজ রং চিহ্নিত অঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে যেন এই অঞ্চলে বাইরের থেকে রোগটির সংক্রমণ না ঘটতে পারে। তবে জোন নিয়ে এখন পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এটা প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আর এই প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কেস ডেনসিটি এবং এর সাথে প্রায় পাঁচটি প্যারামিটার, যেমনঃ রোগীর বৃদ্ধি, রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে কত সময় লাগলো, প্রতি লাখে কতগুলো টেস্ট করা হচ্ছে, প্রতি লাখ টেস্টে কতগুলো পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে জোন ভিত্তিক ভাগ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও বিভিন্ন জেলা- উপজেলাকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোন ভিত্তিক ভাগ করা হবে কিছু সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
প্রস্তাবিত বা মোটামুটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গুলো হলঃ
১) (ক) ১৪ দিনে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় ল্যাব টেস্টে প্রতি লক্ষ নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা পজিটিভ হলে সেই এলাকা লাল জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
(খ)১৪ দিনে জেলা- উপজেলা পর্যায়ে ল্যাব টেস্টে প্রতি লক্ষ নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা পজিটিভ হলে সেই এলাকা লাল জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
২) ক) ১৪ দিনে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় ল্যাব টেস্টে প্রতি লক্ষ নমুনা পরীক্ষায় ৩-২৯ জনের করোনা পজিটিভ হলে সেই এলাকা হলুদ জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
(খ) ১৪ দিনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ল্যাব টেস্টে প্রতি লক্ষ নমুনা পরীক্ষায় ৩-৯ জনের করোনা পজিটিভ হলে সেই এলাকা হলুদ জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩) ৩ জনের কম (০-২) জন হয় তাহলে সেই এলাকা সবুজ জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
এছাড়াও আরও বলা হয়, যেকোন এলাকা জোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হলে সে এলাকা অন্তত তিন সপ্তাহ সেই জোনের অধিভুক্ত থাকবে।
যেমনঃ কোনো এলাকা লাল জোনের অন্তর্ভুক্ত হলে এবং অতঃপর লাল জোনের অনুমাপক না থাকলেও তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় থেকে তিন সপ্তাহ সেই জোনের অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে তারপর হলুদ জোন এবং শেষে সবুজ জোনে যাবে।
এছাড়াও জনগনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে দুই জোন এলাকার মাঝে একটি বাফার জোন করার কথা বিবেচনা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর এর অঞ্চল ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার বেশ কিছু এলাকা উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো অতিক্রম করেছে। এই এলাকা গুলোর মধ্যে রয়েছে পল্টন, কলাবাগান, সুত্রাপুর হাজারীবাগ, গেন্ডারিয়া, গুলশান, রমনা, মতিঝিল, তেজগাঁও, শাহজাহানপুর, হাজারিবাগ এলাকায় ইতোমধ্যেই করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে তাই এই এলাকা গুলো লাল জোনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
জোন চিহ্নিতকরণ এর ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ম্যাপিং এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখনো প্রক্রিয়াধীন। বিভিন্ন যায়গা থেকে যে তথ্যগুলো শেয়ার করা হচ্ছে সেটা পূর্ববর্তী লকডাউনের তথ্য, প্রস্তাবিত লাল, হলুদ, সবুজ জোনের তথ্য নয়। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা কে লাল,হলুদ ও সবুজ বিভিন্ন জোনে ভাগ করা (প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় পজিটিভ কেস এর সংখ্যার ভিত্তিতে)। এ সংক্রান্ত অফিশিয়াল আদেশ না আসা পর্যন্ত এ ধরনের তথ্য শেয়ার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকুন।
জোনভিত্তিক এ ব্যবস্থাপনাকে ট্রাফিক বাতির মত নিয়মিত এবং সহজ নিয়মে ব্যাখ্যা করা যাবে না, যেমন লাল বাতি দেখার কিছুক্ষণ পর হলুদ বাতি তার একটু পর সবুজ বাতি। এক্ষেত্রে এমনও হতে পারে লাল এলাকা দীর্ঘ সময় লাল হয়ে থাকতে পারে, হলুদ যখন সবুজ হওয়ার কথা তখন লাল হয়ে যেতে পারে।