আজ ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪…………
সেকেন্ড প্রফ এর রেজাল্ট………
হিমি ‘র নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ফরেনসিক খারাপ হয়েছিল, কিন্তু বাকিগুলো তো ফেল করার মত দেয় নায় সে। একটা বোর্ড একটু খারাপ হয়েছিল, তাও মাইক্রোবায়োলজি। কিন্তু হিমি কোনক্রমে মনে করতে পারছে না প্যাথলজি কিভাবে খারাপ হল। লজ্জায় মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। সবাই খুশি যারা পাশ করেছে। যারা এক সাবজেক্ট খারাপ করেছে তাদেরও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। স্যার এর সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না তাই বলে তেমন খারাপ ও তো ছিল না।
তবে কেন প্যাথলজির মত সাবজেক্ট খারাপ হবে?
কেন?
মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়েছে। বাসা যেতে হবে।
এই মুহূর্তে হিমির এটা ছাড়া কিছুই মাথায় আসছে না।
বাসায় বাবাকে হিমি জানায়। বাবা তাকে সান্তনা দেয়। হিমি অবাক হয়। মনে করেছিল বাবা অনেক বকাঝকা করবে। কারন হিমির বাবা হিমির পড়াশোনা নিয়ে খুবই সিরিয়াস। ফোন করলেই পড়ছিস কিনা সবসময় জিজ্ঞেস করে। সেই বাবা আজ তাকে কিছুই বলল না। অতি খারাপ লাগার মাঝে, ভাল একটা পাওয়া হল বাবার সান্তনা। হিমির রুমে চারজন পরীক্ষার্থী ছিল। হিমি বাদে সবাই পাশ।
মড়ার উপর খাড়ার ঘা।
সবাই যখন মেডিসিন, সার্জারি পড়া শুরু করেছে, তখন সে প্যাথলজি, ফরেনসিক নিয়ে পড়ে আছে। হিমির তখন মেডিসিন ওয়ার্ড চলছে। সকাল, রাতে দুই বেলা ওয়ার্ড হয়। সবাই ওয়ার্ড এ
যায়। হিমিকেও যেতে হয় অ্যাটেনডেন্স ধরে রাখার জন্য। ক্লাস এ কোন মনোযোগ দিতে পারে না। বন্ধু দের সান্তনা গায়ে কাটার মত বিঁধে। রাতে ওয়ার্ড এ গেলে সবাই কেমন চোখে তাকায়। বলে, রাতে আসার দরকার কি রাতে সাপ্লির পড়া পর বেশি করে, আগে তো পাশ করে হবে।
রাতে ওয়ার্ড এ যাওয়া বন্ধ করে দেয় হিমি। আজকাল রাতে তেমন ভাল ঘুম হয় না। শুধু ভয় করে, আবার যদি ফেল করে। খাইতেও পারছে না কয়েকদিন ধরে। মুখে রুচি, পেটে ক্ষুদা সব আছে, কিন্তু গলা দিয়ে ভাত যেন নামতেই চায় না। হোটেলে
হাফ নিয়ে খেতে বসলেও যেন খাওয়া শেষ হতে চায় না। হিমি শুধুই ভাবে এইরকম তো হওয়ার কথা ছিল না, ফার্স্ট প্রফ এক চান্সে ক্লিয়ার, পড়াশোনা নিয়মিত, তবে কেন এমন হল। কোন কিছুতেই যেন কিছু হিসাব মেলাতে পারে না।
হোস্টলের ছাদে বসে আছে হিমি। আজকের বিকেলটা সুন্দর। হিমি নিচে তাকায়। আচ্ছা এখান থেকে লাফিয়ে পরলে কি মানুষ মারা যাবে!!!! কতবার এইসব চিন্তা করে আবার সরে এসেছে।
নাহ বাবা মা আছেন।
তাদের কথা চিন্তা করে হিমি এইসব চিন্তাকে
দমিয়ে রাখে। মাঝেমাঝে মাথা জ্যাম হয়ে যায়।
এক সাপ্লি তাকে কত কিছু চিনতে শেখায়, বিশেষ করে মানুষ কাছের সকল মানুষ গুলো যেন কেমন সব আচরণ করতে থাকে।
আর হিমি শুধুই অপেক্ষা…………...
আজ ফার্স্ট প্রফের সাপ্লির রেজাল্ট দিল।
বুকটা ধক করে উঠল। সেকেন্ড প্রফের ও রেজাল্ট দিয়ে দিবে কিছুদিন এর মাঝে।
আজ সাপ্লির রেজাল্ট দিল। পাশ করেছে হিমি। কিন্তু কোন অনুভূতি যেন নেই।
ফেইসবুক এ কোন স্ট্যাটাস ও দেয় না। কোন উদযাপনও নেই।
রেজাল্টত সে আগেই পেয়ে গিয়েছিল…………
মানুষ চেনার রেজাল্ট………
লিখেছেন:
বাধন কুমার দাস ( দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ)
জীবনে বড় ধাক্কা না কেলে কখনোই মানুষ চেনা যায় না ৷