৩১ মার্চ, ২০২০
– ডা. শুভদীপ চন্দ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
প্যান্ডেমিক কোভিড উনিশ একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে- আমাদের মেডিকেল স্টাফরা খুব ভাল নেই। সরকারি হিসেব মতেই কিছু ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। গ্লাভস, মাস্ক, চশমা, পিপিই ছাড়া বাকিরা যুদ্ধটি কিছুদিন চালিয়ে নিয়েছেন।
এখন অবশ্য সংকট নেই। প্রথমদিকে কেউ কেউ প্লাস্টিকের রেনকোট পরে সার্ভিস দিয়েছেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এটি সুরক্ষা দেয়, কিন্তু চার-পাঁচ ঘন্টা পরপর কাস্টমাইজড করে নিতে হবে। সেটা করার সুযোগ সবার ছিল না। বাকিরা অধিকাংশ এপ্রোনেই আস্থা রেখেছেন!
অনেক ডাক্তার এবং স্টাফরা পরিবারের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। চাকরি গেলে চলে যাক কিন্তু জীবন থাকুক- এ নীতিতে কেউ কেউ ডিউটিতে অনুপস্থিতও থেকেছেন। আসলে কি পরিমান পিপিই লাগবে, কারা কারা পরবে, কোন কাপড়ে বানানো প্রয়োজন, কি পরিমান N95 মাস্ক-ফেসমাস্ক-গ্লাভস লাগবে, কাদের পরা প্রয়োজন- সুস্পষ্ট ধারণা কারো নেই। ফলে প্যানিক ছড়িয়েছে আরো বেশি। কেউ কেউ দোকানে শাড়ি চয়েজের মতো পিপিই-র কালার চয়েজ করেছে। দুইটা তিনটা চারটা একা নিজের জন্য নিয়ে গেছে।
ডাক্তাররা রেন্ডমলি তাদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিছেন। রোগী নিয়ে বিপদে পড়েছে অনেক মানুষ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ হবে কিনা বুঝতে পারেন নি। ফেসবুকে মেডিকেল পরামর্শের জন্য নিজের নাম্বার দিয়ে এগিয়ে এসেছেন কেউ কেউ। এটি অনেক বড় এক সিদ্ধান্ত। কেউ চায় না তার খাবার টেবিলে রোগীর কল আসুক! টেলিমেডিসিনে স্বেচ্ছায় নাম দিয়েছেন অনেক ডাক্তার। ব্যস্ততার মাঝে এক দুই ঘন্টা অপরিচিতের জন্য ব্যয় করছেন। ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফোনকলে চিকিৎসা চলেছে। তাদের ধন্যবাদ দিতেই হবে।
কোনো লাভ স্টোরিই ওয়ান সাইডেড নয়। বিপরীত চিত্রটি দেখুন। আমি ফেসবুকে লিখি। অল্পকিছু পাঠক। নাম-ছবি-গন্ধ কিছুই নেই, শুধু ডাক্তার পরিচয়টুকু আছে। এক ভদ্রলোক আমার এবং আমার উপজেলার সব ডাক্তারের জন্য পিপিই তৈরি করে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় জিজ্ঞেস করছেন- আর কী লাগবে! হ্যান্ড ওয়াশ, স্যানিটাইজার, ড্রাই ফুড? অথচ উনার সাথে আমার কোনদিন দেখা পর্যন্ত হয় নি!! flow of love আটকে দেয়া অন্যায়। ভালোবাসায় প্রয়োজন খুঁজতে নেই। আমরা নিচ্ছি। তবে উনার সাথে কথা বলে কিছুক্ষণ সত্যিই অপরাধবোধে ভুগেছি। আমরা কী সত্যিই এর যোগ্য?
এ স্ট্যাটাস শুরু করেছিলাম ‘মেডিকেল স্টাফরা খুব ভাল নেই’ বলে। শেষ করছি- ‘এত ভালোবাসা আর এত শ্রদ্ধা নিয়ে সময়ের আর কোনো বিন্দুতেই আমরা থাকি নি’ বলে। মানুষ এখন ওপিডিতে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে, কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে কাশে, নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রাখে। ডাক্তার পরিচয় শুনে ট্রান্সপোর্টে প্রাধান্য দেয়। দোকান খুলে চা খাওয়ায়।
যে যেভাবে পারে সাহায্য করছে। নিজ উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় বেসিন বসিয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে পানির সাপ্লাই ঠিক রাখছে। সাবান বদলে নিচ্ছে। সংস্থা ওয়াইজ টাকা দিচ্ছে। আটকে পড়া গরিব মানুষদের খাওয়াচ্ছে। একা বয়স্কদের বাজার করে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও রাস্তার কুকুর বিড়ালদেরও মানুষ ভুলে যাচ্ছে না।
কোভিড উনিশ প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে অনেক, তবে অনেক ‘জীবন’ গিফটও করে যাচ্ছে! অভাব অভিযোগ দূরে সরিয়ে সে গিফটের গল্পগুলোই হোক।