প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার
লেখাঃ ডা. মুক্তা সারোয়ার
সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন
এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, দিনাজপুর
ইতোমধ্যে, করোনা রোগের ভ্যাক্সিন দেওয়া শুরু হয়েছে এবং পৃথিবীবাসী এই মহামারীর বিরুদ্ধে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। ঠিক তখনই ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন এবং এই তীব্র সংক্রমণশীল ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীকে সতর্কবার্তা জানিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের তান্ডবে ইংল্যান্ড গত মার্চ মাস থেকে লকডাউনের পথে যায়। এবার এই ডিসেম্বরে বড়দিনের উৎসবের প্রান্তে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড হয়তো আবার লকডাউনের পথে যাচ্ছে। গত রবিবার থেকে ইউরোপের অনেক দেশ ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমস্ত বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা করোনা ভাইরাসের এই নতুন strain কে তাদের দেশে ঢোকাতে চায়না। সৌদি আরবও গতকাল থেকে সারা পৃথিবীর সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
পরিবর্তিত এই করোনা ভাইরাসটি প্রথম আবিস্কৃত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। মধ্য নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার পজিটিভ সব করোনা রোগীর ৯০% ছিলো এই পরিবর্তিত ভাইরাস।
বিজ্ঞানীরা দুশ্চিন্তায় থাকলেও বিস্মিত হননি। কারণ করোনা ভাইরাস আবিস্কারের পর থেকে হাজারো বার মিউটেশন হয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। যত দিন যাবে, ভ্যাকসিনের কারণে হোক কিংবা প্রাকৃতিক নিয়মে, মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধ এন্টিবডি তৈরি হবে। তাই ভাইরাসকে বেঁচে থাকতে নিয়মিত মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে হয়। সে চায় মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে মানব শরীরে বেঁচে থাকতে।
ইংল্যান্ডের এই পরিবর্তিত ভাইরাসে অন্তত ২০ টি মিউটেশন ঘটেছে। যার কয়েকটি স্পাইক প্রোটিনে, যার মাধ্যমে সে মানব কোষে প্রবেশ করে বংশ বৃদ্ধি করে। এই মিউটেশনের ফলে তার সংক্রমনের হার প্রায় ৭০% বেড়ে গেছে এবং বংশ বৃদ্ধির হারও বেড়েছে অনেক।
এই মিউটেশন মানব শরীরের এন্টিবডিকে ধোঁকা দেয়।
এতে ভাইরাসের জেনেটিক কোডে ৬৯-৭০ ডিলেশন হয়।
ফলে এন্টিবডি একে খুঁজে পায়না। ফলে এই মিউটেটেড করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীকে কনভালেসেন্ট প্লাজমা দিয়ে কোন উপকার পাওয়া যায়নি। এমনি এই পরিবর্তিত ভাইরাস মনোক্লোনাল এন্টিবডি থেরাপিকেও ফাঁকি দিচ্ছে।
কিছু বৃটিশ বিজ্ঞানী মনে করছেন এই মিউটেশনের ফলে পরিবর্তিত ভাইরাসটির বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাক্সিনগুলো কাজ নাও করতে পারে। তাছাড়া যত বেশি ভ্যাক্সিনেশন হবে, ভাইরাস নিজে বেঁচে থাকার জন্য ততোধিক মিউটেশন ঘটাবে।
যদিও পৃথিবীর বেশির ভাগ বিজ্ঞানী মনে করেন যে কমপক্ষে বছরখানেক মিউটেশন হওয়ার পর সেই পরিবর্তিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে নতুন ভ্যাক্সিন কাজ না করতে পারে। এখনকার ভ্যাক্সিন অবশ্যই কাজ করবে। তবে ফ্লু শটের মতো প্রতি বছর কিংবা কয়েক বছর পর পর করোনা ভ্যাক্সিন এর শট নিতে হতে পারে।
তাছাড়া বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানব শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক জটিল। শুধু মিউটেশন করে ভাইরাস একে ফাঁকি দিতে পারবেনা। এমনকি ফ্লু ভাইরাসের কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর লাগে মিউটেশন করে মানব শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যতো বেশি ভ্যাক্সিনেশন হবে, ততো পৃথিবীর মানুষ নিরাপদ হবে।
তবে ইউরোপের দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডস, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানির সরকার ইংল্যান্ড এর সঙ্গে প্লেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করার প্রক্রিয়ায় আছে।