২৫ ফেব্রুয়ারি,২০২০
চট্টগ্রামমেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর। সেন্ট মার্টিন সমুদ্র সৈকতে তাঁরা পরিষ্কার করেন ১০১ ব্যাগ বর্জ্য। যার ওজন ছিলো প্রায় ৮৩৫ কেজি।
সৈকতের প্লাস্টিক বর্জ্য সরিয়ে ফেলতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল দেখার মতো। শিক্ষার্থীরা এধরনের একটি জনসচেতনতামূলক কাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরে খুবই আনন্দিত। তাঁরা বলেছেন, মেডিকেল জীবন শুধুই পড়াশোনার নয়, পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও আছে। এটি তারই অংশ। তাঁরা জানান, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়েছিলো শিক্ষাসফর শুরু হবার আগেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই চেয়েছিলেন ব্যতিক্রমী কিছু করতে যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সচেতন হবেন।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে এই কর্মসূচির প্রস্তাবনা রেখেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ। একদিন লেকচার ক্লাসে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এতে আগ্রহ প্রকাশ করেন । সৈকতের বর্জ্য সংগ্রহের জন্য তাঁরা চট্টগ্রাম থেকে দুই শতাধিক কালো ব্যাগ নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, গত ২৫ তারিখ দুপুর ১২.৩০ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ২০৩ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষকের একটি দল সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছান। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বেলা ৩.৩০ টা থেকে ৫.৩০ টা পর্যন্ত তাঁরা পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চালিয়ে যান। ১০টি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তাঁরা দ্বীপের পশ্চিম অংশের সৈকতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। এসময় শিক্ষকমন্ডলী প্রত্যক্ষভাবে দিকনির্দেশনা দেন।
সৈকতে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি সম্পর্কে চমেকের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান মুকেশ কুমার দত্ত জানান, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ২০৩ জন শিক্ষার্থী ৮৩৫ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করেন”।
মেডিকেল কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, “এ অভিযান দেখে যদি কেউ ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পানির বোতল যত্রতত্র না ফেলে পুনরায় ফেরত আনে তাহলেই সার্থক মনে করবো। বছরে দুই-একবার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে সব বদলে দেয়া যায়না। প্রতিবছর এখানে নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এতে করে পর্যটকরা একটু হলেও সচেতন হবেন বলে আশা করছি।”
শিক্ষক উম্মে তাসলিমা ও রাহনুমা রুবাইয়াত বলেন, “স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপন করতে নিজেকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সে বিষয়ে আগামীদিনের চিকিৎসকদের মাঠ পর্যায়ে এনে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।” এ অভিযানে ছাত্র ছাত্রীরা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন বলে তাঁরা মনে করেন।
চমেকের সহকারী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ জানান, “আগামী প্রজন্মের চিকিৎসকদের নিয়ে সৈকতের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতে দেশের বিভিন্ন স্থানের সৈকত পরিষ্কার অভিযান চালানো হবে।”
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, অন্যান্য পর্যটকেরা ব্যাগ হাতে বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দেখে উৎসাহ দিয়েছেন। অনেকে তাঁদের ছবি তুলেছেন এবং বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপেও তাদের এই অভিনব উদ্যোগের ছবি দেখা যাচ্ছে। তাঁরা আরো জানান, পরিষ্কারের পর বর্জ্য নিয়ে সৈকতের পাশে অবস্থিত নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার ডাস্টবিন গুলোতে রেখে দেয়া হয় যেন পরবর্তীতে আবর্জনা অপসারণে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুবিধা হয়।
পরিচ্ছন্নতা চলাকালীন এবং শিক্ষা সফরের পুরোটা সময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা বিভিন্ন চায়ের দোকান, অন্যান্য দোকানদার, ফেরিওয়ালা, সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং আগত পর্যটকদেরকে যথাস্থানে ময়লা ফেলার জন্য সচেতন করেন।
সফরের ২য় দিন শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীরা ১০ শয্যা বিশিষ্ট সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর সমুদ্র থেকে হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয় যা মূলত নানা দেশের সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ফেলা। এতে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ প্রতিবেশের প্রতি বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিক্ষাসফরে এসে এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র বিভিন্ন বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হোক। একইসাথে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় ও জনসচেতনতায় তাঁদের এ ধরনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক – এটাই আগামীর প্রত্যাশা।