প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০১ জুলাই, ২০২২, শুক্রবার
‘মুসাফিরখানা’ এমন একটি দাতব্য সংস্থা যেখানে ঢাকার বাইরে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আগত মানুষজন বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এই মহৎ উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা কথা বলেছি এর তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ মাওলানা আহমাদ উল্লাহ আমজাদ সাহেবের সাথে।
প্রশ্ন: ‘মুসাফিরখানা’ শুরুর কথাগুলো জানতে চাই। কার উদ্যোগে কিভাবে শুরু হয়েছিলো?
উত্তর: মুসাফিরখানা মুসলমানদের একটি ঐতিহ্য ছিল। বর্তমানে তা বিলুপ্তির পথে। ঢাকায় আমাদের মুসাফির খানার চিন্তা শুরু হয় বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইমুম সাদী ভাইয়ের একটি ঘটনা থেকে। তিনি একদিন গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেখতে পান কয়েকজন নারী পুরুষ ফুটপাতে আতংকিত হয়ে বসে আছে। তারা গ্রাম হতে ঢাকা মেডিকেলে রোগী নিয়ে এসেছে। ভর্তি হতে না পেরে কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় ফুটপাতে রাত্রি যাপন করছে। আমরা একদিন ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে খালি মাঠে ফুটপাতে শুয়ে আছে। এখান থেকেই এই সকল বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষের জন্য ঢাকায় বড় বড় হাসপাতালগুলোর আশে পাশে একটি করে মুসাফির খানা করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
প্রশ্ন: শুরু করার পর প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন? ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো সম্পর্কে যদি একটু জানাতেন।
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠার পর প্রায় সকলেই উৎসাহ প্রদান করছেন। তবে বাড়ী ভাড়া নিতে গিয়ে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এমন একটি মহৎ মানব সেবার কাজে মানুষ বাড়ী ভাড়া দিতে চায় না। অবশেষে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে পেরেছি কিন্তু এখন অসহায় মানুষের এত ভিড় যে আমরা তাদের কে জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।
প্রশ্ন: বর্তমানে কি পরিমাণ মানুষ এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারছে?
উত্তর: আপাতত আমরা ৩টি রুমে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষের থাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: এখানে আসার নিয়মাবলি যদি একটু বিস্তারিত বলতেন।
উত্তর: যারা মুসাফিরখানায় থাকতে চান তারা আসার আগে এন আই ডি নাম্বার ও যে ডাক্তার বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন তার নাম সহ আসার তারিখ উল্লেখ করে মুসাফির খানার তত্তাবধায়ক মাওলানা আহমাদ উল্লাহ আমজাদ সাহেবের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে বার্তা পাঠাবেন। তার নাম্বার ০১৯১১৪৬২৪৯৫। মুসাফিরখানা থেকেই ফোন করে কনফার্ম করা হবে।
যে সকল কাগজপত্র ও শর্তপুরন করা লাগবেঃ
১) ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রমাণক বা প্রেসক্রিপসন।
২) রোগী ও অভিভাবকের জাতীয় সনদের ফটোকপি।
৩) মহিলা রোগী হলে অবশ্যই তার সঙ্গীকে মাহারাম ব্যক্তি হতে হবে।
৪) একজন রোগীর সাথে একজন বা সর্বাধিক ২ জন সঙ্গী থাকা যাবে।
৫) ঢাকাতে যাদের কোন রকম থাকার স্থান নেই এবং টাকা পয়সা দিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই তাদের জন্যই এ ব্যবস্থা।
প্রশ্ন: এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যা ব্যয় হয় সে সম্পর্কে একটু বর্ণনা করবেন।
উত্তর: উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের মধ্যে রযেছে বাড়ী ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, মুসাফিরখানার একজন তত্বাবধায়ক, একজন সিকিউরিটি ও একজন ক্লিনার এর বেতন।
প্রশ্ন: ঘর ভাড়া বা সিট ভাড়া কত করে পড়ে?
উত্তর: কারো থেকে কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়না। সকলের জন্য বিনামুল্যে থাকার ব্যবস্থা।
প্রশ্ন: সহজেই কি খালি ঘর বা সিট পাওয়া যায়? নাকি সিরিয়াল দিতে হয়?
উত্তর: আগে সিরিয়াল দিতে হয়।
প্রশ্ন: খাওয়ার ব্যবস্থা কি ভাবে হয়?
উত্তর: আপাতত খাওয়ার ব্যবস্থা নিজেদের করে নিতে হয়।
প্রশ্ন: অর্থের ব্যবস্থা কিভাবে হয়?
উত্তর: আমরা নিজেরাই শুরু করেছি। তবে সকলেই আর্থিকভাবে অংশগ্রহন করতে পারবেন এবং সকলের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। হাফেজ মাওলানা আমজাদ সাহেবের নম্বরে বিকাশ অ্যাকাউন্টে যে কেউ সহযোগিতা পাঠাতে পারেন। ভবিষ্যতে আমাদের খাবার এবং অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস চালু করার ইচ্ছে আছে।
সবশেষে বলতে চাই, আমাদের এই মুসাফিরখানা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক মাবতার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ায় এখানে প্রতি বছর অডিট হয়। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং এর মাধ্যমে আমরা এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি।
যেকোনো সময় মুসাফিরখানা পরিদর্শন করতে আসা যাবে।
পরিদর্শন করার জন্য সবসময় আমন্ত্রিত। একই সাথে এ সম্পর্কিত যে কোন মতামত এবং সহযোগিতা প্রদানে তত্ত্বাবধায়ক সাহেব আহবান জানান।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ডা. টি এইচ এম এনায়েত উল্লাহ খান