পাবলিকেশন বৃত্তান্তঃ পর্ব ১ ও ২-
আমরা অনেকেই পাবলিকেশন দরকার জানি, কিন্তু এটা কি বিষয় সেটাই জানি না।
তার চেয়েও বড় কথা অনেক এম,বি,বিএস শিক্ষার্থীই জানে না জারনাল (journal) জিনিসটা কী?
……
এই বিষয়টা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম কিছুদিন আগে এ,আই,ইউ,বি এর অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য ও প্রেজেন্টেশন শেষে।
সদ্য পাশ করা একজন এম,বি,বিএস ডাক্তার আমাকে বললেন, আমি প্রথম আলোতে কিছু লেখা লিখেছি, এই জারনাল আর্টীকেল গুলো কি পাবলিকেশন হিসেবে উল্লেখ হবে।
জারনাল আর জারনালিস্টকে একি চিন্তা করে ফেলায় এ অবস্থা। প্রথম কথা জারনাল কোন সংবাদপত্র নয়, এটি রিসার্চ পেপারের সংকলন। সেখানে প্রথম আলোকে জারনাল মনে করা সত্যই বেশ হতাশাজনক।
হতাশাজনক হলেও সত্যি, আমাদের অনেক মেডিকেল শিক্ষার্থীর ধারণাই এরকম, অথবা কোন ধারণাই নেই।
একদম নতুনদের জন্য সহজ করে বলি।
আমরা যেই টেক্সটবুকই পড়ি না কেন, সেটা কিন্তু লেখক নিজে তৈরি করেন নি।
এক বালতি পানি যদি এক বিশাল সমুদ্র থেকে নেওয়া হয়, সেটার মত। আমাদের টেক্সটবইটি এক বালতি পানির মত, আর সমুদ্র হল PubMed, Embase, Cochrane, google scholar ইত্যাদি ইনডেক্স বা লাইব্রেরী। এখন নদী যেমন সমুদ্রে এসে মিশে তেমনি অসংখ্য জারনাল মিলিত হয়ে যুক্ত হয় ওই ইনডেক্স বা লাইব্রেরীগুলোতে।
পারতপক্ষে এগুলো আসলে জারনালের সুচীপত্র বা নির্দেশিকা টাইপের। এখন নদীতে যেমন অসংখ্য পানির স্রোত থাকে, তেমনি জার্নালগুলোতে থাকে বছরের পর বছর অসংখ্য বিজ্ঞানী/গবেষকদের সাধনার ফসল বা রিসার্চ পেপার।
সমুদ্র, নদীর প্রসঙ্গ টানলাম বিশালতা বোঝানোর জন্য।
জারনালে পাবলিকেশন হিসেবে থাকতে পারে- অরিজিনাল আর্টিকেল, মেটা-এনালাইসিস, সিস্টেমিক রিভিউ, ন্যারেটিভ রিভিউ, কেস রিপোর্ট, কেস সিরিজ, শর্ট কমিউলিকেশন, স্টুডেন্ট রিভিউ, ইন্টারভিউ, কমেন্টারি, লেটার টু এডিটর, ফটোগ্রাফি, এক্সপেরিয়েন্স, এডিটরিয়াল ইত্যাদি।
এর মধ্যে যেটাই আপনি করেন না কেন, সেটাই আপনার পাবলিকেশন হিসেবে গণ্য হবে। এবং পাবলিকেশনের অপার সুযোগ-সুবিধাগুলো আপনি পাবেন।
পর্ব ১ শেষ, এবার পর্ব ২……
এবার PubMed Indexed এবং peer reviewed জার্নাল নিয়ে কিছু বলি…
PubMed বা MedLine হল এক সুবিশাল অনলাইন ডিজিটাল লাইব্রেরী। এবং হেলথ সাইন্সের সব থেকে বৃহত চারণক্ষেত্র। এখন পর্যন্ত এই লাইব্রেরীর অন্তর্গত মোট রিসার্চ পেপারের সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের এর national institute of health এবং National Library of Medicine এর যৌথভাবে এটি তৈরি। বিশ্বের সকল ভাল মেডিকেল জারনালই এটার অন্তর্গত, এবং অন্যান্য জার্নালের স্বপ্ন থাকে অন্তর্ভুক্ত হবার।
পাবমেডের রেফারেন্স থাকলে সেই পেপার নিয়ে আর কোন প্রশ্ন কেউ তোলে না, এবং আমাদের মেডিকেল সাইন্সের টেক্সটবুকের প্রায় সকল তথ্যই এই লাইব্রেরী থেকে সংগ্রহ করা।
আমি যে সকল আর্টিকেলের টাইপ বলেছিলাম তার সবগুলোই PubMed এ আছে। এটি ছাড়া জনপ্রিয় লাইব্রেরীর মধ্যে আছে Embase, Google Scholar ইত্যাদি। আর specialty এর উপর ভিত্তি করে আছে Cochrane (for control trials), DARE (for systemic reviews), CANCERLIT (Cancer database), PsycINFO (A mental health Library), AIDSLINE (HIV database) ইত্যাদি।
এখন আসা যাক Peer Reviewed এর কথায়। এটা বোঝার জন্য আগে জার্নালে Article processing এর কিছু সংক্ষিপ্ত বিষয় বলি। একেক জার্নালের নীতি একেকরকম। তাই যে জার্নালে লেখা জমা দেওয়া হবে সেটার নীতিই মেনে চলতে হয়। জার্নাল ওয়েবসাইটে Author Instruction নামে একটা লিঙ্ক থাকে, সেটা দেখে সেই ফরম্যাটে আর্টিকেল তৈরি করতে হয়।
কিন্তু সাধারণ কিছু নিয়ম প্রত্যেকটিতেই থাকে। চাওয়া সকল ফাইল জমা দেওয়ার পর ওরা এটাকে ওদের নিজস্ব রিভিউয়ার (Reviewer) দিয়ে রিভিউ করায়। এই Reviewer দের কাজ হল আর্টিকেলটি জার্নালের নিয়ম মেনেছে কিনা দেখা, এটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা, এবং ছাপানো যায় কিনা মতামত দেওয়া। তাদের থেকে গ্রীণ সিগন্যাল পেলে এটা যায় Editor দের কাছে। উনারা নিজে দেখার আগে এটি পাঠায় কিছু বিশেষজ্ঞদের কাছে, যারা আর্টিকেলে লেখা বিষয়টি সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। কমপক্ষে ৩জন এমন ব্যাক্তিকে পাঠানোর পর যদি তারা এই আর্টিকেলটি নির্ভুল,উপকারী,নতুন-তথ্যযুক্ত ও যথার্থ বলেন তবে এটি accept করা হয়। এরপর এটি নিয়ে Editor গণ বসেন এবং বারবার author কে ইমেইল বা জার্নাল সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন ভুল সংশোধন করতে বলেন। একদম Perfect হবার পর এটি Proof reading/copy-editing এ এবং পরে Diagraming এ যায়।
এই স্টেপগুলোর ভিতরে আরও অনেক বিস্তারিত আছে, আমি শুধু হেডিং গুলো বলেছি।
এখন কোন জার্নাল যদি এই স্টেপগুলো ঠিক মত মেনে চলে তাহলে তাকে Peer reviewed জার্নাল এবং এতে প্রকাশিত লেখাকে Peer reviewed paper বলে।
Health Science সম্পর্কিত যে কোন Peer reviewed জারনাল যদি PubMed এর দেওয়া নিয়ম মেনে চলে এবং যদি তাদের বছরে কমপক্ষে ৩ বার প্রকাশনা থাকে তাহলে PubMed Team তাদের screening করার পরে তাদের লাইব্রেরির অন্তর্গত করে । জার্নালটি PubMed এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে, তার অন্তর্গত সকল পাবলিকেশনও PubMed অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরে।
অর্থাৎ <সকল ব্যাসই জ্যা, কিন্তু সকল জ্যা ব্যাস নয় > এর মত। বোঝা যাচ্ছে সকল PubMed indexed জার্নালই peer reviewed, কিন্তু সকল Peer reviewed জারনাল PubMed Indexed নয়।
আমাদের দেশে ও বিদেশে যে-সকল পাবলিকেশন লাগে একাডেমিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে, সেগুলোর সবই মুলত Peer reviewed হওয়া বাধতামূলক। এর মধ্যে যেগুলো PubMed এর অন্তুর্ভুক্ত, সেগুলোকে আরও মর্যাদা দেওয়া হয়, এবং প্রতিযোগিতায় গিয়ে থাকে।
যেকোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
পরবর্তী পর্বে জারনাল ও পাবলিকেশন এর আরও কঠিন কিছু বিষয় সহজ ভাষায় বলা হবে……
for further inquiry about this topic: You can contact author:
Tonmoy Shekhor Biswas
Editor, International Journal of MS, USA
Peer Reviewer, British Medical Journal
Peer Reviewer, PLOS One, and Bio-Med central
Can this article be published in English please?
Nice and important information for new scientists. Keep it up Tonmoy.
I am also learning things from your posts.