যশোরের মনিরামপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর হামলা, গুরুতর আহত ৩

আজ ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ইং সন্ধ্যায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ রেহনেওয়াজ (রাজশাহী মেডিকেল ৪৫ তম ব্যাচ) এর উপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। জানা যায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, সাধারন ভাষায় হার্ট এটাক এর রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর মারা গেলে রোগীর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে জরুরী বিভাগ ভাংচুর করে এবং ডাক্তার রেহনেওয়াজ গুরুতর আহত হন। রক্তপাত বন্ধে তার মাথায় একাধিক সেলাই দেয়া হয় তাতক্ষনিক ভাবে। ভাংচুরের পর রোগীর লোকজন পালিয়ে গেলে তাদের আর খুজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিস্তারিতঃ
২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ এ রোগী আসে বুকের নিচের অংশে ব্যাথা, সাথে বমিভাব এবং বমি নিয়ে। জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রেহনেওয়াজ রনি  প্রাথমিক চিকিৎসা দেন, ইসিজি করতে বলেন এবং রোগীর অবস্থা গুরুতর সন্দেহে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। রোগীর রোগ লক্ষণ দেখে ডাঃ রেহনেওয়াজ রোগীর লোকদেরবার বার বলেন ইসিজি করতে এটা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাাটাক হতে পারে। এ অবস্থায় রোগীর আত্নীয়রা পালটা অভিযোগ করে বলেন, “আপনারা কিছু হইলেই যশোর পাঠান, রোগী কচু দিয়া ভাত খাইছে তাই পেট ব্যাথা হইছে, আপনি বমির ওষুধ দেন।” ১০ মিনিট পার হবার পরেও ইসিজি না করায় ডাক্তার তাদের আবারো হার্টের সমস্যার কথা বলে ইসিজি করতে বলেন এবং যশোর নিতে বলেন। কিন্তু তখনো তারা বলে, ” যশোর নিব না, যা হবার এইখানেই হবে, আপনি গ্যাসের ওষুধ দেন। এভাবে আরো ২০ মিনিট পার হয় এবং ডাঃ রেহনেওয়াজ তাদের আবারো বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হার্ট অ্যাাটাক এর রোগীর চিকিৎসা করার মত কোন ব্যাবস্থা নেই এবং এই বিষয়ে কোন বিশষজ্ঞ ডাক্তারও নেই যা একমাত্র যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যাবে। এর বেশি দেরি করলে রোগী বাচানো যাবে না।

এভাবে আরো ১ঘণ্টা ২০ মিনিট কাউন্সিলিং করার পরেও রোগীকে উচ্চতর সেন্টারে না নেওয়ায় রাত ৮টার দিকে রোগী মারা যায়। রোগীর সাথে উপস্থিত লোকজন সেই মুহুর্তে শোক সামলে ডাক্তারের প্রশংসা করেন যে তিনি যথেস্ট চেস্টা করেছেন। এই পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক থাকে কিন্তু রাত ৮ঃ৩০ এর দিকে জরুরী বিভাগে ঢুকে হামলা চালায় এবং উপস্থিত ডাক্তার, ওয়ার্ড বয়, সাব এসিস্টেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কে মেরে রক্তাক্ত করে, জরুরী বিভাগ ভাঞ্চুর করে। হামলাকারীদের সংখ্যা ছিল ৪০-৫০ জন। মাথা ফেটে রক্ত বের হওয়া অবস্থায় মসজিদে দৌড়ে পালিয়েও রেহাই পাননি ডাঃ রেহনেওয়াজ।

ঘটনার পর এলাকার এমপি এবং অন্যান্যদের সাথে ডাক্তারদের কথা হয় এবং মাত্র একজন কে গ্রেপ্তার করা হয়। যশোর বিএমএ থেকে ২৪ ঘন্টার সময় দেয়া হয়েছে এর মধ্যে সবাইকে গ্রেপ্তার করা না হলে কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে। দেশের সকল উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী শনিবার কালোব্যাজ ধারন করতে বলা হয়েছে।

আহতদের ছবিঃ
1902963_10204340355696723_2191239284066613946_n

ডাঃ রেহনেওয়াজ রনি

1904042_10204340357536769_2072568375778840563_n

সাব এসিস্টেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার

1948126_10204340357696773_6473682452304592149_n

ডাঃ রেহনেওয়াজ রনি

10354604_10204340359736824_5737123576170495558_n

আহত ওয়ার্ডবয়10387544_10204340358176785_246274731096290736_n 10599672_10204340358416791_3775488314538939160_n 10676151_10204340360576845_4298851102344594752_n 10698678_10204340359096808_8497851488695012422_n 10734253_10204340358096783_2695874133929070870_n

ডক্টরস ডেস্ক

2 thoughts on “যশোরের মনিরামপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর হামলা, গুরুতর আহত ৩

  1. দূঃখ এমন সুন্দর দেশে জন্মেছি!!!!!!!!!……………………।

  2. সবাই পার্সনাল ফায়ার আর্মস রাখ। গভঃ অফিসার
    দের জন্য লাইসেন্স পাওয়া মোটামুটি সহজ।পিঠ একেবারে দেয়ালে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

মিস্ত্রি দোকানি এখন ডাক্তার!

Sat Oct 25 , 2014
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় হাতুড়ে ডাক্তারদের তোলপাড়। অনেকদিন ধরে বেশকিছু ব্যক্তি তাঁদের নামের সঙ্গে এমবিবিএসসহ বিভিন্ন ডিগ্রি জুড়ে দিয়ে ‘ডাক্তারি ব্যবসা’ করে আসছে। কয়েকদিনদিন পূর্বে এই ‘ডাক্তারদের’ কেউ কেউ শিক্ষক, রং মিস্ত্রি বা মুদি দোকানদার ছিলেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার নামধারী বেশকিছু ব্যক্তি রোগী দেখার দেদার ব্যবসা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo