প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -২৯
” রমজান আলীর দুম্বা আমদানি “
লেখকঃ
ডা. মাসুদ আমিন
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ
আসছে কুরবানী নিয়া রমজান আলীর ভাবনার শেষ নাই। তিনি সময় পাইলেই ভাবেন আর ভাবেন কিন্তু কোনো কুলকিনারা করিয়া উঠিতে পারেন না। দিন কয়েক আগে পত্রিকা মারফত তিনি জানিতে পারিলেন এইবার কুরবানীতে প্রায় দশ লক্ষ কুরবানীর পশুর ঘাটতি হইবে। ভারত গরু দেয়া বন্ধ করায় ইতিমধ্যেই গরুর মাংসের কেজি চারিশত টাকা ছাড়াইয়া গিয়াছে। বাজারে কেবলমাত্র ছোট ছোট বাছুর জবেহ করা হইতেছে। তিনি কুরবানী প্রিয় জাতির সমস্যা সমাধানের জন্য ভাবনার সাগরে তলাইয়া যাইতে লাগিলেন। তিনি বিভিন্ন ভাবে তত্ত্ব তালাশি করিতে লাগিলেন। গরুর ব্যাপারি হইতে শুরু করিয়া কসাই সবার সাথে সমস্যা নিয়া গুরুগম্ভীর অালোচনা চালাইয়া যাইতে লাগিলেন। তাহাতে তিনি কোনো আলোর রোশনাই দেখিতে তো পাইলেন-ই না বরঞ্চ তাহার মনে তীব্র ভীতির সঞ্চার হইতে লাগিলো। তাহার বিগত বছরের কথা ইয়াদ হইতে লাগিলো। তবে কি এবার লক্ষ টাকায় ছাগল খরিদ করিতে হইবে। তাহার আহার নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটিতে লাগিলো। বেগমসাহেবার বোন জামাতাদের নিকট মুখ রক্ষা করিতে না জানি হায় এইবার কতো টাকা কুরবান হইয়া যায়। তিনি বিছানায় গড়াগড়ি যান আর নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটায় বেগমসাহেবার কড়ামিষ্টি বকুনি খান। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন যাহা থাকে কপালে সমস্যা নিয়া বেগমসাহেবার সাথে আলোচনা করিবেন। তিনি হয়তো কোনো আলোর দিশা দেখাইতে পারিবেন। এক শুভ রাত্রিতে বেগমসাহেবাকে মিষ্টি পানে তৃপ্ত করিয়া রমজান আলী দেশের হালহকিকত নিয়া আলোচনার রেলগাড়ী চালাইলেন। শিশু নির্যাতন হইতে শুরু করিয়া ধর্ষণ, সব্জির মূল্যবৃদ্ধি কিনা আলোচনা করিলেন। শেষ জংশনে আসিয়া তুলিলেন কুরবানীর পশুর ঘাটতি জনিত আকাশচুম্বি মূল্য বৃদ্ধির আশংকার কথা। শুনিয়া বেগমসাহেবা বলিলেন সৌদিআরব যদি লক্ষ লক্ষ হাজীর জন্য দুম্বা আমদানী করিতে পারে তবে আমরাও পারিবো। আমাদের হতাশ হইবার কোনো কারন নাই। আমাদের ব্যাংকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গড়াগড়ি যাইতেছে। তুমি ব্যাংক লোন করিয়া অষ্ট্রেলিয়া হইতে গরু দুম্বা আনিয়া দেশ তলাইয়া দাও। ভারতকে দেখাইয়া দাও তোমাদের রসকষহীন গরু আমাদের না হইলেও চলে। আমাদের ডলার আছে। আমরা পৃথিবীর যে কোনো দেশ হইতে হার্ড ক্যাশে যাহা খুশী আনিতে পারি। বিএমডব্লিউ গাড়ী হইতে দুম্বা,কিনা পারি ! বেগমসাহেবার বুদ্ধি শুনিয়া রমজান আলী দিলে বড়ই শান্তি পাইলেন। পরদিন রমজান আলী তাহার ব্যাংকে গিয়া ম্যানেজার সাহেবের নিকট বিষয়টি তুলিলেন। ম্যানেজার সাহেব তাহাকে চা-বিস্কুটে আপ্যায়ন করিয়া বলিলেন যতো টাকা লাগে আপনি নিয়া যান,আমরা মানুষ দেখিলে বুঝি কাহাকে লোন দেওয়া যাইবে। আপনি শুধু আমার ব্যাংকের দিকে লক্ষ্য রাখিবেন। আপনি প্রজেক্ট ফাইল করুন। মনে মনে বলিলেন তোমাকে দিবো লোন ! তুমিতো নিজেই দুম্বা।