প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ জুন ২০২০, বুধবার
খুলনায় রাইসা ক্লিনিকে একজন রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত হাসপাতালের পরিচালক ডা. রাকিব উদ্দিন (৫৯) কে নির্মমভাবে হত্যা করেছে রোগীর ক্ষুব্ধ স্বজনেরা।
বিগত ১৪ জুন বিকেল ৫ টায় খুলনার রাইসা ক্লিনিকে শিউলী বেগম নামের একজন নারী সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১৫ জুন সকালে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেও তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব না হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় নেওয়ার পথেই ১৫ জুন রাতে তিনি মারা যান।
উক্ত ঘটনার জের ধরে ১৫ জুন রাত ০৮.৫০ ঘটিকায় রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. রাকিব উদ্দিনের ওপর হামলা করে রোগীর ক্ষুব্ধ স্বজনেরা। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীরা ডা. রাকিবকে নির্মমভাবে নিজেদের হাত ও লাঠি দ্বারা আঘাত করছে। অতর্কিত এই হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান ডা. রাকিব। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাকিব উদ্দিন বাগেরহাট মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষ ছিলেন। স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানের পিতা ছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “ঘটনার পর খুলনা সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করতে গেলে পুলিশ নানান তালবাহানা করে আমাদের ঘুরিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ নেয় নি।”
এই মর্মান্তিক হত্যায় শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে পুরো চিকিৎসক সমাজ। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ইনতিসার কামাল আক্ষেপ করে বলেন,
“এরকম distressing একটা ভিডিও দেখার জন্য কি ডাক্তাররা এই করোনা কালেও ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছেন? এই জন্য কি ডাক্তার করোনা রোগীর সেবা করছে? এই প্রতিদান এর জন্য?”
এই আক্ষেপ যেন গোটা চিকিৎসক জাতির। ডা. মো. আবদুর রশিদ বলেন,
“কার জন্য পিপিই পরে বিকৃত চেহারা বানাবেন? কার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবেন? কার জন্য নিজের পরিবারকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলবেন? এ জাতি চিকিৎসকদের কসাই আর টাকার জন্য লোভী ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনা। যে দেশে চিকিৎসক পেটানো ছিল মামুলি ব্যাপার, আর এখন হত্যা!!!”
সৌদি আরব থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কবির জুয়েল বলেন,
“তীব্র নিন্দাসূচক কিছু বিশেষণেই যেন শেষ হয়ে না যায় ডাক্তারদের প্রতিবাদ; খুনিদের গ্রেফতার পরবর্তী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজীর দেখতে চাই।”