লাইফ ইন লকডাউন, ডে ইলাভেন

১৮ এপ্রিল ২০২০:
ডা. শুভদীপ চন্দ

এ পাড়াটা শিক্ষকদের পাড়া। আশেপাশে কয়েকটি বাসায় হাই স্কুলের টিচাররা থাকেন। সবাই তাদের বাসায় প্রাইভেট পড়ান। অন্য সময়ে গমগম করে ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া আসায়। এক ব্যাচ আসে, আগের ব্যাচের যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এক ঘন্টা পড়ে নিজেরা বের হয়, অন্য ব্যাচ আসে। লকডাউনের পর থেকে বন্ধ প্রাইভেট পড়ানো। শিক্ষকরা এতো লম্বা ছুটি কখনো পান নি। যে জীবন কোলাহলের সে জীবনে এরকম দমবন্ধ শান্তি কী ভাল লাগে!

আজকে বাজারে গেলাম। বাজার ভর্তি মানুষ। রমযান মাস চলে এসেছে। কেউ জানে না সামনের দিনগুলোতে কী হবে। ভীড়ের এটি একটি কারন। সবাই ব্যাগ ভরে বাজার করছে। সোশ্যাল ডিসটেন্সিংয়ের বালাই নেই। পুলিশ মাইকে বলে বলে ক্লান্ত হয়ে বলা বাদ দিছে। অথচ একজন প্রবেশ পথেই থার্মাল স্ক্যানার নিয়ে বসতে পারতেন। সন্দেহভাজনের নেজাল ও থ্রোট সোয়াব কালেক্ট করতে পারতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এ দেশে গাড়ি কেনার বরাদ্দ আছে, থার্মোমিটার কেনার বরাদ্দ নেই। দূর থেকে তাপমাত্রা দেখার এ হালকা যন্ত্র আমি আজ পর্যন্ত কোথাও দেখি নি।

প্রতিদিন দেশের করোনা আপডেট ঘোষিত হয়। দুপুর থেকে আমরা মোবাইল পত্রিকা খুলে বসে থাকি। এটি এমনভাবে প্রেজেন্ট করা হয় যেখানে সংখ্যা ছাড়া কিছু নেই। কোন কোন জেলায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, বয়সের রেঞ্জ কত, কিভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন- এ জিনিসগুলো জানতে পারলে সচেতন হওয়া যেত। এরজন্য ফেসবুকেই থাকি বেশিরভাগ সময়।

মাঝেমাঝেই আমি লেখা থামিয়ে পড়ি। নতুন কিছু তো লিখছি না। আমি সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত অংশের প্রতিনিধিত্ব করি এবং এসব কথা বহুবার বলা হয়েছে। যদি সম্ভব হতো এ শহরের হোটেল রেস্টুরেন্টে কাজ করা শিশুদের কথা বলা যেত, বাসে কাজ করা হেল্পারদের কথা বলা যেত, বিভিন্ন ছোট দোকানে কাজ করা শ্রমিকদের কথা বলা যেত- তাহলে নতুন কিছু থাকতো। এ দেশের বিরাট একটি অংশ ঘেষাঘেষি করে থাকে, যেখানে খায় সেখানে ঘুমায়, অল্প আলো আর বিনা ভেন্টিলেশনের এক দুই রুমে পুরো পরিবার মিলে থাকে। যদি তাদের কথা বলতে পারতাম, ভাবতাম নতুন কিছু লিখেছি। এ দেশে এমন অনেক চাকরি আছে যেখানে আপনি আপনার চয়েজের কথা বলতে পারবেন না, কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে কিছু লিখতে পারবেন না, এক ঘন্টা লেটের কৈফিয়ত দিতে পারবেন না। যেখানে আপনার চাকরি চলে গেলে আপনি কম্পেনসেশন পাবেন না। এ লকডাউনে এ সমস্ত মানুষদের কথা কখনো জানা হবে না। অথচ গল্পসব তাদের দখলে।

দশদিনের সাহায্য দেয়া হয়েছিল। সে দিয়ে টেনেটুনে চৌদ্দ দিন চলবে। পনেরোতম দিন কি হবে- এ ভাবনায় যারা ঘুমুচ্ছে না- তাদের কথা শোনা হবে না। মাটির চুলায় বানানো পিঠা বিক্রি করতেন অনেক মহিলা- তারা এখন কেমন আছেন কিভাবে খাবার যোগাড় করছেন- কেউ বলবে না। কিছু রোগী হাসপাতালে আসতেন ফ্রি ঔষধ নিতে। বিরক্ত হতাম। এখন করোনার ভয়ে আসছেন না অনেকদিন। ঔষধ ছেড়ে বাসায় সর্বনাশ ডেকে আছেন কিনা জানা হবে না। আজ বাজারে দশ বারো মাস বয়সী এক বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন এক মা, তার বাচ্চাটির জ্বর ছিল সে কথাও তাকে বলে আসা হয় নি!

আমরা কোনো সাই ফাই ছবির চরিত্রে অভিনয় করছি। আমরা বের হচ্ছি না, কথা বলছি না, একটু কিছুক্ষণ কোথাও দাঁড়াচ্ছি না। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছি। রোবটের মত আচরণ করছি।

বাড়ির ছাদে নয়নতারা গাছে ফুল এসেছে। নয়নতারা গাছ ঈশ্বরের এক বেখেয়ালি সৃষ্টি। কোনো সৌন্দর্য নেই, কেমন দাঁড়িয়ে থাকে। বাতাসে যেন উড়ে না যায় শক্ত করে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে। শাখা গুলো ছোট বড়। কিন্তু তার শাখার মাথায় যে গোলাপি বেগুনি ফুল ফোটে- আশ্চর্য রকমের সুন্দর। সৌন্দর্য কত সিম্পল হতে পারে সে দেখার জন্য হলেও নয়নতারা ফুল দেখতে হয়!

আজ কোনো আর আপডেট নেই।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯ : বসুন্ধরায় হাসপাতাল নির্মাণের কাজ ৭৫ ভাগ সম্পন্ন

Sat Apr 18 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ করোনা রোগীর চিকিৎসায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হাসপাতাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উল্লেখ্য দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় সম্প্রতি সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo