প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ জুন ২০২০, শনিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
বুক ভর্তি ভার নিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো। ওরকম ভার নয় যে একদলা ইকোস্পিরিন গিলতে হবে, বা মন খারাপ। বলবো বিমর্ষতা- হাসতে ইচ্ছে হচ্ছে না বা কথা বলতে। ‘বেঁচে থাকবো’ ধরে এগোলে কোয়ারেন্টাইন প্রিয়ডটা গোল্ডেন সময়- অনেক কিছু করা যেতো। কিন্তু কিভাবে যেন ছুটিগুলো ইড়িয়ে উড়িয়ে দিলাম। লম্বা বিকেলের শুরুতে মাঠে নেমেই আউট হওয়ার যেমন অনুভূতি- তেমন হচ্ছে।
এখন এটি স্পষ্ট করোনা সহসাই যাচ্ছে না। এভাবে অফুরন্ত সময় নিয়ে আরো কিছুকাল পাড়ি দিতে হবে। এজন্য পরবর্তী জন্মদিনের আগেই জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। একটি ‘ডে প্ল্যানার’ সফটওয়্যার ডাউনলোড দিলাম। টু ডু লিস্টে এক নম্বরে রাখছি বিজনেজ ফ্রেন্ডলি এন্ড থটফুল টাইম ম্যানেজমেন্ট। দুই নম্বরে রাখছি কুইট ব্যাড হ্যাবিটস।
এই যে লোকেরা বিরক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে, কেউ তো কিছু বলে না। আজ একজন ফোন দিয়ে লোকাল মেডিকেল কলেজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জানালো। তার সমাজে পজিশন ভাল তিনি কেন কথা বলেন না। ফেসবুকেও কখনো লিখতে দেখি নি। আসলে এ সমাজে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে অন্যের কষ্ট, ভোগান্তি। ‘ভোগান্তি’ শেষ হয়ে যাক কেউ চায় না। অন্যের ভোগান্তি আমাদের ভাল রাখে।
তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ- এ শহরে এক পাড়া আছে যেখানে ড্রেনের গন্ধ, ধুপের গন্ধ ও প্রসাধনীর গন্ধে একাকার। কেউ চায় না এটি থাকুক কিন্তু কেউ এও চায় না তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। আসলে সবাই শুধু ততটুকুই স্পেস ছাড়তে রাজি যতটুকুতে কথা বলা যায়, আস্ত মানুষের জন্য যতখানি জায়গা লাগে সেটুকু কেউ ছাড়বে না। শহরের এককোনে অসুখ-পশুত্ব-অনিচ্ছা-ধর্ষণ জড়ো হয়ে আছে জেনেও শহরবাসী নির্বিঘ্নে ঘুমায়, সেখানে তারা হাসপাতাল নিয়ে ভাববে- বাড়াবাড়ি রকমের চাওয়া হয়- জানি।
আপাতত ঘরে থাকা মানে ফেসবুকিং। বিশাল এডমায়ারার মিছিলসহ একেকটি স্ট্যাটাস যায়। কমেন্টগুলো স্লোগানের মতো লাগে। বেশিরভাগ লেখা ভাল। দিন বড় হলে আরো বেশি ফেসবুকিং করতাম। যদিও টু ডু লিস্টে তিন নম্বর রাখছি- লেস ফেসবুকিং। পাশের বাসায় রাগারাগি হয়। রাগ হচ্ছে বাঘের মতো। ভীষণ গর্জিয়াস কিন্তু খুব ভয়ঙ্কর। বশে আনার আগেই খেয়ে ফেলে। তাই চার নম্বরে থাকছে মেডিটেশন। পাঁচ নম্বরে অতি অবশ্যই রিডিং টেক্সটবই।
বলা হয় তিন জন মানুষ যদি এক ঘরে গাদাগাদি করে ঘুমায়, তারা একটু পর এক রিদমে শ্বাস নিতে ও শ্বাস ছাড়তে থাকে। এটিই অভ্যস্ততা। আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এক ঘেয়েমি জীবনে। নতুন কিছু বলতে পারি না, ভাবতেও পারি না। এক পঞ্চাশোর্ধ মহিলা রোগী এসেছিল মাথা ফাটিয়ে। তার স্বামী মাথা ফাটিয়েছে। উনি কোনমতেই সিলাই দিতে দিবেন না। স্কাল্প ওপেন হয়ে আছে- তিনটা স্টিচ লাগবে- আমরা বোঝাই। তিনি গোঁ ধরে থাকেন। উনি রক্তাক্ত। বাইরেরটা আমরা দেখছিলাম। ভেতরেরটা দেখতে পারছিলাম না। অথচ ভেতরেরটাই ডিপ ছিল। এতো বছরের সংসার, ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি নাতনির সামনে স্বামীর কাছে মার খেয়েছেন- অপমান লাগবেই। ওখানে মলম দিতেই তিনি শিশুর মতো অভিযোগ শুরু করলেন। টু ডু লিস্টে ষষ্ঠ জিনিস তাই ‘সেকরেড থিঙ্কিং’।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে বারো রাশি চার ধরনের উপাদান দিয়ে গঠিত। আগুন, বাতাস, পানি, মাটি। এ চার উপাদানের সঠিক ভারসাম্য প্রয়োজন মানসিক স্থিতির জন্য। আমার মূল উপাদান আগুন। মাটির সাথে আমার দোস্তি। আমার বোন মাটি, বাবা মাটি, রুমমেট মাটি, রিডিং পার্টনার মাটি, বেস্ট ফ্রেন্ড মাটি, গুড ফ্রেন্ড মাটি। এমনকি বড় ভাইয়ের পিচ্চিটাও মাটি। তাই আমার জন্য মাটি হচ্ছে এটাচমেন্ট। সাত নম্বর পয়েন্টঃ এভয়েড আর্থ সাইন।
আপাতত এ কয়টি দিয়ে শুরু করছি। পরে বাড়ানো যাবে। কোভিড কোয়ারেন্টাইন লকডাউন সময়ের আর অপচয় করবো না।