প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ জুন ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
ভালোবাসা হচ্ছে মোমবাতি আলোর মতো। ঘন অন্ধকারে পথ চেনাতে সাহায্য করে। কিন্তু আলোর দিকে চোখ রাখতে রাখতে যে ভুলেই যায় গন্তব্য কোন দিকে- তার জন্য আলাদা কী?
অধিকাংশ মানুষ ছুটছে তীব্র গতিতে, কোন দিকে ছুটছে না জেনেই ছুটছে। কারো কারো মতে ভালোবাসা ‘মাস্টার কি’, সব দরজাই খুলবে এক চাবি দিয়ে। কিন্তু জীবন সিনেমা-নাটক-উপন্যাস নয়। মানুষের কল্পনা অনেক সুন্দর বিধাতার কল্পনার চেয়ে।
যদি বলেন কোনটি উত্তম প্রেম করে বিয়ে না বিয়ে করে প্রেম, আমি দ্বিতীয়টির কথা বলবো। ‘বিয়ে’ মানুষ সৃষ্ট সবচেয়ে বড় দুর্যোগের নাম। সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ দুর্যোগের পরে পরেই লাগে। অবশ্য ‘ভালোবাসা’কে আশীর্বাদ বলা ঠিক হচ্ছে কিনা জানি না। ভালোবেসে কষ্ট পেতে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। না পারা যায় সহ্য করা, না পারা যায় সব ছেড়েছুড়ে আসা। এক জীবন খুব অল্প সময় একজন মানুষকে জাজ করার জন্য। এরমাঝে প্রেম, বিয়ে, যুদ্ধ, অভিনয়- প্রিসাইস ডায়াগনোসিসে অনেক ভুল হয়ে যায়।
তারপর যখন একাকী নিরালায় বসে হঠাৎ একদিন আবিষ্কার হয়ঃ এতো যে দুশ্চিন্তা, বাড়তি কেয়ার, রান্না বান্না সব শুধু ম্যাড়মেড়ে ও একঘেয়ে ছিল, সাথে ইজিলি রিপ্লেসেবলও ছিল- তখন আর যাওয়ার জায়গা থাকে না! কেউ খুব ভালোবাসতে উদগ্রীব কিন্তু নেওয়ার লোক নেই- এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার আর নেই।
কোভিড উনিশ আমাদের কত বিচিত্র চরিত্র যে উন্মোচন করছে লিখে শেষ হবে না। ভদ্রলোক কার্ডিওমায়োপ্যাথির রোগী, হার্টের কার্যকারিতা ৪০%। সাথে কিছু কোমরবিডিটি আছে। বয়স ৩৮। করোনার ভয়ে সারাদিন বিছানায়ই থাকতেন। বউটি চাকরি ছেড়ে পুরো সময় সংসারেই ব্যয় করতেন। অর্থের অভাব ছিল না- টের পেতাম। কিন্তু অর্থই সব নয় স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মাঝে। সেদিন যখন বউটি ‘শক্তিশালী ঘুমের ঔষধ’ এর খোঁজ করছিল- একটু অবাকই হয়েছিলাম। আজ শুনলাম লোকটির অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে এখন অনেক বড় অশান্তি।
বুঝি সবসময় একশো শতাংশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। আমার চেম্বার রোগীদের আমি খুব গভীর ভাবে দেখি। ত্রিশ চল্লিশ বছরের সংসারে সবচেয়ে বড় ফিল্টারটির নাম বিয়ে। জীবনের প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, প্রত্যেক সম্পর্ক, প্রত্যেক খরচ এ ফিল্টার দিয়ে আগে পার হতে হয়। যেখানে প্রেম বা প্যাশন কম গুরুত্বপূর্ণ; অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া, স্নেহ, মমতা, ক্ষমাশীলতা, লোক দেখানো আচার নিষ্ঠায়। কেউ কাউকে গভীরভাবে ফিল করে না। সাহস নেই বলে এ সমাজ এ বিধিব্যবস্থা ধর্ম সব টিকে আছে।
ম্যাসেঞ্জারে অনেক গল্প জমা হয়! লোকেদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। টের পাই সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ পৃথিবীর দূরতম কর্নারে বসে প্রার্থনা করছেন। একটি শুভ কামনার মূল্য অনেক।
চেষ্টা করি বহু রেখেঢেকে লিখতে। যাকে নিয়ে লিখছি সে যেন না বোঝে। সমাধান খোঁজা আমার উদ্দেশ্য নয়। অনেক সময় ধরা পড়ে যাই। কোনটিই ব্যক্তিকথা নয়, একজনের কথা নয়। লেখার এ কমজোরিটুকু না দেখে চলবেন।