প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার ডা.শুভদীপ চন্দ
মানুষ সাধারণত যার উপকার করে তাকেই সে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। কতবার দেখেছি যে অপরিচিত লোকটি রক্ত দিলেন তিনিই ফোনে রোগীর খোঁজ নিচ্ছেন। যিনি উপকৃত হলেন তার দায়িত্ব ধন্যবাদ পর্যন্তই। বন্ধুত্ব টিকে থাকে যখন দুইপাশেই প্রচুর উপকার থাকে। নয়তো একপাশ ভারেই কাত হয়ে যায়। এ পৃথিবী হয়তো সে ভারেই একটু চ্যাপ্টা।
দুই হাতে ফুল নিয়ে ভক্তিভরে যে দেবীর পূজা করলো দেবীরা তাকে মনে রাখে না। মনে রাখে যখন কেউ পিছন ফিরে বাঁ হাতে ফুল দেয়। চাঁদ সওদাগর ও মনসাদেবীর গল্প যেমন। ফুলের ভাগ্যই সকল পবিত্রতা সকল ভক্তি নিয়ে দেবীর পায়ের কাছে পড়ে থাকা। কত সত্য হৃদয়াবেগ যে এরকম মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে- কে রাখে তার খবর! অথচ সে ফুল হয়তো কোনো রক্ত মাংসের মানুষ পেলে মাথায় গুঁজে রাখতো। কোনো প্রেম কোনো ভালোবাসা যেন একপাশকে দেবতা দেবী বানিয়ে না দেয়। মানুষ কখনোই তার কল্পনার মতো সুন্দর হবে না। আর প্রেমিকের কল্পনা তো শ্রেষ্ঠ শিল্পীর কল্পনা। তবুও বলবেন মানুষ কেন দেবীদের প্রেমে পড়ে? সব জেনেও কেন সাধ্যের মধ্যে প্রেমে পড়ে না? উত্তর তার মেয়ে সৌন্দর্য তার মুখশ্রীতে নয়, তাকে ঘিরে থাকা ঘনীভূত দূরত্বে। যেখানে দেবতা ও দেবীরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এখন সময় আটকে আছে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে। আন্দোলনের হাস্যকর রূপ হাসার চেয়ে কাঁদায় বেশি। দুই মানুষের প্রকাশ্য চুম্বন নিয়ে দেশ- জাতি- সমাজ দ্বিধাগ্রস্থ। যেন সকল প্রগতি সকল সমস্যা এ প্রশ্নের উত্তরে আটকে আছে। আমরা হয়তো একদিন ভবিষ্যতে বলবো- ‘আমাদের সময় ওসব করা যেতো না, সরকার অনুমতি দিতো না!’ আরেকটি রেঁনেসা আসুক এ অঞ্চলে। মানবতাবাদের পুনর্জন্ম হোক। দীর্ঘ এক হাজার বছরের মিথ্যে শালীনতার পর মধ্যযুগের সমাপ্তি হয়েছিল নগ্ন ছবি আঁকার মাধ্যমে সে যেন আবার ফিরে আসে। মানুষ কেবল তার ঈশ্বরের জন্য বাঁচে না। ইহকাল ও বর্তমানে অনেক কিছু আছে আনন্দ করার মতো। সে আনন্দ ধারা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের ধারা, পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানের ধারায় আবার ভেঙ্গে যাক সকল বাউন্ডারি। আবার বলা হোকঃ ‘ঘোড়ার জন্ম হয়, মানুষের জন্ম হয় না- মানুষকে ‘মানুষ’ বানানো হয়।’
গত কয়েকদিনে কোভিড নিয়ে অনেক গল্প জমে গেছে। কে ভেবেছিলো এদেশে একদিন এইচএসসি পরীক্ষা হবে না, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিতর্ক হবে না, প্রতিযোগিতা করে নেওয়া অলিম্পিক হবে না। দর্শক শূন্য গ্যালারিতে আইপিএল হবে, লা লীগা হবে, রেসলিংয়ের তারকারা ফাঁকা দর্শকে বক্তৃতা দিবেন। দেশের রাজা রাষ্ট্রপতিরা ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকবেন। এসবই হচ্ছে। সামনে শীত আসছে। সেসময় সিজনাল ভাইরাসগুলো একটিভ থাকে। থাকে দূষণে ক্লান্ত ঢাকা শহরের ফুসফুস। তখন হয়তো আমরা সেকেন্ড ওয়েভ পার করবো। আমেরিকা ও স্পেনের মতো দেশগুলো সেকেন্ড ওয়েভে ভুগেছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে পূজার সময়। মণ্ডপগুলো এখনি নোটিশ জারি করতে পারে মাস্ক ছাড়া দর্শনার্থী ঢুকতে পারবে না। আজ বাজারে গিয়েছিলাম। সবজির বাজারে পুরোই আগুন। সবজিও কম। মুখী মিষ্টিকুমড়া মার্কা বাজে সবজি ছাড়া কিছু নেই। মাছ আছে। ইলিশ জন্মযুগে এমন সস্তা দেখি নি। কিন্তু এলার্জির জন্য খেতে পারছি না। ইলিশ মাছ স্পর্শ করলেও হাতে পায়ে চাকা চাকা উঠছে।
শুনলাম রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ স্যার কোভিড আক্রান্ত। আমি উনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। উনার নেতৃত্বে আমাদের কলেজের পঞ্চাশ বছর পূর্তি হওয়ার কথা ছিল। উনি আমার জীবনের এক অংশের সাথে জুড়ে আছেন। স্যুভেনিরে এক লেখার জন্য উনি আমার বিরুদ্ধে একাডেমিক কাউন্সিলে মিটিং ডাকতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সে গল্পের জন্য জেলে ঢুকাতে। আমাদের তৈরি এক সংগঠন নাম ‘তার্কিক’। ডারউইনিজম নিয়ে আলোচনা করায় নাস্তিকতার অভিযোগ তুলে তিনি সেটা বন্ধ করে দেন। সত্যি বলতে আমরা যেরকম আদর্শ ভাবি- আদর্শবাদী, ছাত্র অন্তপ্রাণ, পিতৃতুল্য- সেরকম শিক্ষক খুব বেশি পাই নি।
একজন ছিলেন- জাকির স্যার। মেডিসিনের হেড। পৃথিবীর সব সমস্যা নিয়েই উনার কাছে যাওয়া যেত। বকতেন, আবার রুম থেকে বের হলে ভুলেও যেতেন। মেডিসিন ডিপার্টমেন্টকে তিনি পরিবারের মতো বানিয়ে রেখেছিলেন। ছিলেন মেডিসিনের আশরাফ স্যার। মানুষ এতো সাদাসিধা হতে পারে- বিশ্বাস হয় না। খারাপ ছাত্র ছিলাম, আর যোগাযোগ হয় নি। জ্ঞান হওয়ার পরই বুঝেছিলাম- শিক্ষক সবসময় ভাল ছাত্রদের জন্য! ভাল থাকুক সবাই যাদের কাছে পড়েছি। জ্ঞানে বা ডাক্তারিতে তাদের কাছাকাছিও যেতে পারলাম না। স্যারেরা কেন প্র্যাকটিস বন্ধ করছেন না- বুঝি না!