প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ অক্টোবর ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
আজ এক ইকো করতে বসলাম অনেক চেষ্টা করেও ভাল ভিউ আনতে পারলাম না। এতো রাগ হচ্ছিলো যে ইচ্ছে করছিলো সামনে থাকা মেশিনটাকে ভেঙ্গে দেই! ভালো লাগে না। প্রত্যাশা ও সংসারের অসামঞ্জস্যতা আমার বিষের মতো লাগে। নিজেকে লাগে কেমন যেন বনসাইয়ের মতো- বাড়তে পারছি না বাইরে থেকে, ভেতরটাও অন্ধকারে পরিপূর্ণ। কারো সাথে যে দুদণ্ড কথা বলবো, কেউ যে আমাকে বুঝবে এমনও নেই। যে যা বলে মূল রাস্তার বহুদূর। ট্রেনের লাইনের মতো যদি কিছু থাকতো মাঠ- ঘাট, বন- বাঁদাড়ে একান্ত সমান্তরাল বেশ হতো। তা নেই, আছে ধু ধু মাঠকে দুই অংশে বিভক্ত করা রাজপথ।
আমি জানি আমি যথেষ্ট সৌভাগ্যবান। যে স্বার্থহীন, প্রয়োজনের সাথে সম্বন্ধহীন শ্রদ্ধা সম্মান ভালোবাসা আমি পেয়েছি তা বিরল। অধিকাংশ আমার পরিচয়ই জানে না। কিন্তু তারপরও মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগে। ভালোবাসার দুই রূপ। ভাল রূপটি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। যেখানে পছন্দ নেই সেখানেও আলোর প্লাবন ছড়িয়ে দেয়। ফুল যেমন পূজার কথা ভেবে ফুটে না- ভাল লাগে বলে ফুটে। দ্বিতীয় রূপটি বস্তুগত রূপ। নিরাপত্তা দাও, নিশ্চয়তা দাও, কর্তৃত্ব দাও, নাম দাও। শিব পূজার সঙ্গে বেল পাতার যে সম্পর্ক তেমন। যেন বিল্বপত্রের পূজার কর্তব্য রক্ষা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। প্রথম পর্ব পবিত্র, কিন্তু ঊর্ধ্বপাতনে আর্ত হৃদয়ে আরও বেশি ক্লান্ত হয়। ভাল রূপ চয়েজ করা সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত। সুখ নেই। তাই বলে কী কাউকে ঠকিয়ে সুখ? চাপিয়ে দিয়ে সুখ? তাও না। হতো যদি এক অসন্তুষ্টির ইকো নিয়ে এতো মনোদুঃখ কেন? জীবন এমন এক আখ্যান যেখানে ভুলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। অতগুলো পক্ষ এখানে একবিন্দুতে এক হয় যে ‘ভুলে গেছি’ বলাই আশ্চর্য। পৃথিবী কিছুই ভুলে না। এখানে পেন্সিলে লেখা দাগ রাবারে মোছা যায় না, কলমে লেখা শব্দ কেটে পূণরায় লেখা যায় না। তাই মিথ্যে এক স্বস্তি। মৃতপ্রায় রোগীর কাছে মরফিন, পেথেডিন যেমন- তেমন সমাধান। অন্তত বুজিয়ে রাখে আসল মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত। হাসপাতালে অসংখ্য রোগী দেখেছি বিষ খাওয়ার। ভালোবাসার সত্য রূপ দেখে ‘ট্রুথ ইজ বিউটি’ নীতির ফাঁকি ধরতে পেরেছি। আমি ভাবতে পারি না ভালোবাসার জন্য কারো বুকের উপর হাঁটু চেপে পশু হত্যা করার মতো মুখে নল ঢুকাতে হবে। তারচেয়ে মিথ্যে অভিনয় ঢের ভাল। প্রবঞ্চনা অন্তত বঞ্চনার চেয়ে ভাল শিল্প।
কী থাকলো এত কথায়? ভুলা চলবে না, রাবারে মেটানো যাবে না, সত্য সবসময় সুন্দর নয়। কখনো কখনো মিথ্যাও মহান! আজকাল অনেকেই আসে গল্প করতে। ব্যক্তিকথা শুনি। শুনতে ভাল লাগে। মানুষের গল্পগুলো নির্দিষ্ট কারো নয়; মানুষের। ফুলিয়ে ফাপিয়ে জীবনকে অনেক সাহসী করে দেখানো হয়। এখন শুনে শুনে বুঝি- অধিকাংশ পলায়নের গল্প আত্মসমর্পণের নয়, আত্মরক্ষার। প্রেমের নামে সব চালিয়ে দেয়। তাই তো হবে! ভূপৃষ্ঠের উপর জঙ্গলটিই স্বাভাবিক। বাগান সবসময় কৃত্রিম।