প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -২২
“শত রঙের ঈদ”
লেখকঃ
দেওয়ান মাহতাব দিদার
শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ,সিরাজগঞ্জ।
কোরবানীর ঈদ।আমাদের সেবার গরু কেনা হয়নি।বাবার হঠাৎ প্রচন্ড অভাব কিনা,পশু কেনার সামর্থ্য হয়নি তাঁর।
প্রতিবেশীদের নানা রঙের,নানা রকমের পশু,সেগুলোকে ঘিরে তাদের উচ্ছ্বাস দেখে আমি মা কে প্রশ্ন করেছিলাম,আমরা গরু কবে কিনব।মা আমাকে জীবনে কোনদিন মিথ্যে সান্ত্বনা দেননি,তাই আমিও জীবনে তাঁর সঙ্গে মিথ্যে বলি নি।স্থির দৃষ্টিতে আমাকে নিরীক্ষন করে বলেছিলেন,এবার আমরা কোরবানী দিব না বাবা।তোমার বাবার হাতে টাকা নেই।আমার শিশুমন ব্যাথিত হলো,কিন্তু সে বাস্তবতা মেনে নিতে শিখেছিল…
মধ্যবিত্তের বড় যন্ত্রনা,সে হাত পেতে চাইতেও পারে না,চুপ করে শুধু সইতেও পারে না।তাই বাবা চুপচাপ ঈদের দিন ভোরে চলে গেলেন গ্রামের বাড়ি।বাবা কোরবানী দেন নি ঠিক,তবে সেখানে তার ভাইয়েরা দিচ্ছিল।বাবার আশা ছিলো,হয়ত ভাগে কিছু পাওয়া যাবে।তার ভাইরা তাকে নিরাশ করেনি সেবার।’বড় ভাই’ হিসেবে সারাজীবন অনুজদের বোঝা বয়েছেন বাবা,হয়ত তাই কর্তব্যবোধেই তারা নিজ ভাগ থেকে দিয়েছিলো কিছু।
বাবা সেটুকু নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে এসেছিলেন।ঈদের সারাদিনে আমি সেবার মাংস খাইনি।তাই সন্ধ্যায় বাবার হাতে সেসব দেখে বড় খুশি হলাম।অথচ অবাক হয়ে দেখলাম,মা’র চোখে পানি।
নীরব অশ্রু বিসর্জন দিয়ে তিনি তার সন্তানদের কাছে ডেকে বললেন,একটা সময় ঠিকই তোমরা বড় মানুষ হবা।সেই সুখের দিনে এই কষ্টের দিনগুলো মনে রাইখো,তাইলে জীবনে অহংকার করার সাহস হবে না।
রান্না করলেন মা।বাসার নিচতলায় এক কূলহীন অনাথ থাকতো তখন,তাকে ডেকে নিয়ে আসতে বললেন।নিয়ে এলাম।সে ছেলেটিসহ পরিবারের সবাই একসাথে বসে খেলাম।হাসি দিয়ে,খুশির আবরনে সবাই মিলে মুহূর্তে শূন্য স্থানে আমাদের আনন্দভুবন গড়ে ফেললাম।আমার মনে হলো,এইতো আমার ঈদ!
আনন্দের অনেক রঙ।তার সাদাকালো রূপটিও আমাকে এমনভাবে সেবার মুগ্ধ করে ফেললো যে,আমি জীবনটায় আনন্দের উপস্থিতি নতুন করে চিনতে শিখলাম।
এরপর এই ছোট জীবনে আরো অনেক রঙিন ঈদ কাটিয়েছি।কারোই দুঃসময় চিরকাল জুড়ে থাকে না,আমাদেরও থাকে নি।কিন্তু সে ঈদের স্মৃতি মুছে ফেলতে দেইনি নিজেকে।
হাজারো স্মৃতির ভীড়ে সে স্মৃতি অমূল্য,সে যে আমায় ভিন্ন দৃষ্টিতে জীবন দেখতে শিখিয়েছিল!