প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -১৯
” শিউলীফুল ”
লেখকঃ ডা.আল্ – আফরোজা সুলতানা
সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ (সিওমেক)
২০১১-১২
চশমার কাচ টা আলতো করে ঘসে নিয়ে আবার চোখে পড়লেন জব্বার সাহেব।
চারপাশ টা কি আসলেই ঘোলাটে?
নাকি চশমার কাচ ঘোলা তা ঠাহর করতে পারছেন না।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝলেন ঘোলাটে জিনিস গুলো আসলে কুয়াশা।
শীত তাহলে চলেই এল!
চাদর টা আরেকটু ভাল করে জাপটে নিলেন গায়ে।
কোথা থেকে যেন হাসনা হেনা র তীব্র গন্ধ এসে নাকে লাগল। এক মুহূর্ত যেন সুগন্ধ টা উনার চারপাশে এসে থমকে রইল।
উনি প্রায় ই বারান্দায় এসে বসলে সুগন্ধ টা পান। কিন্তু গাছটা কোথায় আজো ও বের করতে পারলেন না।
গাছটা খুব সম্ভবত লাগিয়েছিল শিউলি নাকি হাস্নাহেনা?।
ছিঃ ছিঃ! নিজের বউ এর নাম ই উনি মনে করতে পারছেন না!!
বয়সের ভারে ইদানীং আর কিছু ই মনে থাকছে না। কিছুক্ষন ভাবার পর মনে হল নাহ শিউলী ই হবে ওর নাম। শিউলী ফুলের মত ই কি কোমল ছিল মেয়েটা।
সাদামাটা চেহারা, বিশেষ কিছু না কিন্ত যখন বড় বড় চোখ মেলে ঘোমটার ফাকে দিয়ে তাকাত তখন উনার মনেহত ডুবে যাচ্ছেন কোন এক অতল জলের গভীরে।
অনন্তকাল ধরে এভাবেই ডুবতে চান।
অদ্ভুত অদ্ভুত শখ ছিল মেয়েটার। তারমধ্যে একটা ছিল হরেক রকম ফুলের গাছ লাগানো।
ঘুরতে ভালবাসত। কথা ছিল তাকে নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরবেন জব্বার সাহেব।
কিন্তু হুট করে একদিন কাউকে কিছু না বলে অজানা দেশে পাড়ি জমাল মেয়েটা।
খুব বেশি কি অভিমান ছিল তার?
হয়ত বা। জব্বার সাহেব তাকে সময় দিতে পারতেন না।
মেয়েটা সারাদিন বাসায় বসে তার জন্য অপেক্ষা করত। কিভাবে তার দিন কাটত শুধু সেই জানে!
প্রথম প্রথম চঞ্চল কিশোরী দের মত ছিল সে।
তার যে বিয়ে হয়েছে, সংসার করতে হবে সেটা বোঝার মত মন তখন ও তইরি হয়নি।
সারাদিন শুধু ছুটাছুটি আর খিলখিল করে হাসত।
জব্বার সাহেব মুগ্ধ হয়ে দেখতেন সেই সব ছেলে মানুষী।
আর ভাবতেন এই বাচ্চা বউ কবে বড় হবে!
বাড়ির মুরুব্বিরা শিউলীর দস্যিপনা নিয়ে কথা শুনাতে শুরু করলে উনি শিউলী কে নিজের কাছে নিয়ে এলেন।
ভাল ই দিন যাচ্ছিল তাদের।
কিন্তু আস্তে আস্তে শিউলীর দস্যিপনা কমে গেল।
চারদেয়ালের মাঝে বন্দী শিউলী বোধহয়
খাচায় আটকে থাকা পাখির মত ছটফট করত।
তারপর একদিন অভিমানে খাচা ছেড়ে পালাল।
জব্বার সাহেব তাকে বলতেও পারলেন না কত ভাল বাসেন, আটকাতেও পারলেন না। তার আগেই……
এসব ভাবতে ভাবতেই আবার তীব্র গন্ধটা নাকে এসে লাগল।
কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার।
গন্ধ টা আসলে এখন মনেহচ্ছে
হাসনাহেনা র না, শিউলী ফুলের।
জব্বার সাহেবের চোখ ছলছল করে উঠল
আবার চশমারকাচ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে…
তিনি ধরা গলায় ডেকে উঠলেন
“শিউলী, ও শিউলী…
আমার চশমাটা মুছে দাও তো! ?