আজ এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখতে যাচ্ছি যেটা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ বা আলোচনা করা মানা এই ধরণের পর্যায়ে পড়ে।
কিন্তু সম্প্রতি দেশে শিশুদের যৌন নির্যাতনের হার এত বেড়ে গিয়েছে যে এই ব্যাপারে কিছু আলোকপাত করাটা খুব জরুরী মনে করছি।তাই আজ লিখবো Pedophile দের নিয়ে এবং তারা যে রোগে ভুগছে এর নাম Pedophilia.
Pedophilia এবং Pedophile কি?
তের (১৩) বছর বা এর কমবয়সী শিশুদের প্রতি অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ বোধ করাকে Pedophilia বলে।
আর এ ধরণের মানুষদের Pedophile বলে।
একজন pedophile এর বয়স অবশ্যই ১৬ বছরের উপরে হতে হবে।
Pedophilia কি মানসিক রোগ?
-অবশ্যই মানসিক রোগ।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশান তাদের Definition and statistics of mental disorder (DSM 5) এ pedophilia কে যৌনবিকৃতি ও মানসিক রোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সব Pedophile রাই কি শিশু নির্যাতনকারী?
যদিও আমাদের দেশে কোন গবেষণা নেই তবে বিদেশী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সব শিশু নির্যাতনকারী ই pedophile নয় আবার সব pedophile ই শিশু নির্যাতনকারী নয়।
অনেক pedophile নিজেদের এই বিকৃত রুচির কারণে মন: কষ্টে ভুগে একাকী জীবনযাপন করেন।কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও বিভিন্ন সময় ও সুযোগে তাদের pedophile রুপটা বেরিয়ে আসে।
মেয়েরাও কি pedophile হয়?
হ্যাঁ,যদিও তুলনামুলকভাবে ছেলেদের চেয়ে সংখ্যায় কম, কিন্তু মেয়েদের মধ্যেও pedophilia তে আক্রান্ত রোগী আছে
Pedophile রা কি ছেলে বাচ্চা মেয়ে বাচ্চা উভয়ের প্রতি ই আকর্ষিত হয়?
হ্যাঁ,যদিও বিপরীত লিঙ্গের বাচ্চার প্রতি আকর্ষণের হার বেশি কিন্তু উভয় লিঙ্গের প্রতি ই যৌন আকর্ষণ অনেক pedophile এর ই আছে।
কিভাবে Pedophile চিনবেন?
– খেয়াল রাখতে হবে সব pedophile ই শিশু নির্যাতনকারী নয়।তবে অরক্ষিত শিশু,উপযুক্ত পরিবেশ পেলে যে কারো ভেতরে লুকায়িত দানব জেগে উঠতে পারে।
নিচের জিনিসগুলো খেয়াল করুন:
যে কেউই শিশু নির্যাতনকারী হতে পারে।এমনকি আপনার পরিবারের একদম ভেতরের এবং কাছের কোন লোক ও হতে পারে।ছেলে,মেয়ে,শিক্ষাদীক্ষা,পেশা কোনকিছুর সাথে এর সম্পর্ক নাই।যে কেউই ভেতরে ভেতরে pedophile হতে পারে।
১.কেউ যদি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আপনজনের মত ব্যাবহার করে তার দিকে লক্ষ্য রাখুন।
২.অনেকেই বাচ্চাদের খেলাচ্ছলে ‘বিয়ে করতে চায়,বউ/জামাই বানাতে চায়’,এই ধরণের বাচ্চাদের সাথে অ্যডাল্ট টাইপ ব্যাবহার করা লোকদের থেকে বাচ্চা দূরে রাখুন।
৩. বাচ্চাকে শিখিয়ে দিন কেউ যাতে তার ‘প্রাইভেট পার্টস’ এ টাচ না করে,করলে সাথে সাথে যাতে আপনাদের জানায়।নি:সংকোচে বাচ্চাকে প্রাইভেট পার্টস কোন জায়গা তা দেখিয়ে দিন।
৪.বাসায় কারো কাছে বাচ্চা রেখে যেতে হলে বাসায় সিসি ক্যামেরা ব্যাবহার করার চেষ্টা করবেন।
৫.একটু বড় হয়ে ওঠা বাচ্চাদের যতদুর সম্ভব কোলে ওঠা পরিহার করবেন।বাচ্চাকে কারো কোলে চেপে বসতে দেখলে নিষেধ করুন
৬.pedophile রা সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে শিশু ও তার পরিবারের কাছাকাছি আসে ভালো ব্যাবহার করে,এরপর সুযোগ বুঝে আসল রুপে আত্মপ্রকাশ করে।
তাই যত কাছের বন্ধু বা আত্মীয় ই হোকনা কেনো,শিশুকে একা দোকানে বা মার্কেটে বা শিশুপার্কে ছাড়বেননা।এমনকি খালি বাসায় ও না
৭.বাচ্চাকে কোন কারণ ছাড়াই বিমর্ষ বা অন্যমনস্ক দেখলে রাগারাগি না করে তাকে জিজ্ঞেস করুন কেউ তাকে ‘বিরক্ত’ করছে কিনা,প্রাইভেট পার্টস এ হাত দিচ্ছে বা দেয়াচ্ছে কিনা
৮.হঠাৎ যদি দেখেন বাচ্চা কাউকে অপছন্দ করা শুরু করেছে, আগে কোলে যেতো এখন যাচ্ছেনা তাহলে বাচ্চাকে না বকে খুঁজে দেখুন ওই ব্যাক্তি pedophile কিনা!
সবশেষে বলি
Pedophilia এর কি কোন চিকিৎসা আছে?
অবশ্যই আছে।বেশির ভাগ pedophile ই চায় এই বিকৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে।কেউ কেউ যৌন নির্যাতনকারীতে পরিণত হয়।বাকি যারা ভালো হতে চায় তারা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে পারেন।
সাইকোথেরাপি,বিহেভিয়ার থেরাপি নিলে আর কিছু ঔষধ খেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রনে থাকে।
সবার বাচ্চা নিরাপদ থাকুক,সুস্থ থাকুক এই কামনা করি।
লিখেছেন ঃ ডাঃ মোঃ শাইখ আব্দুল্লাহ। fcps ( medicine),RP (medicine) DMCH।