প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ জুলাই ২০২০, শুক্রবার
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৯ জুন সোমবার রাতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দ্বারা হয়রানির স্বীকার হলেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক।
গত ২১ মার্চ ২০২০ দেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে সর্বপ্রথম শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক দেশের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে একত্রে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন। প্রাথমিকভাবেই রোগীর তথ্য গোপন করায় করোনায় আক্রান্ত হন বেশ কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। সর্বশেষ তথ্যমতে ২৭ জুন মেডিসিন ইউনিটে কর্মরত একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হন।
তিনি শেবাচিম এর করোনা ইউনিটে ভর্তি হন এবং হাসপাতাল ভবনের চারতলায় আলাদা কক্ষে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর ২৯ জুন রাত আনুমানিক ১.০০ টার দিকে পিপিই এবং মাস্ক পড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় দিদার ও নুরুল ইসলাম (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) ওই নারী চিকিৎসকের দরজায় সজোরে ধাক্কাধাক্কি করে। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাদের ওয়ার্ডবয় পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে এবং তারা জানায় সেই কেবিনের ভেতরে নাকি তাদের সহকর্মী আছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল। এরপর চিকিৎসক তার পরিচয় দিলে তারা চলে যায় কিন্তু রাত ০৩.২০ মিনিটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তারা আবারও নির্দিষ্ট কক্ষে জোরে ধাক্কা ও লাথি দিতে থাকে এবং জোরপূর্বক কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করে। এভাবে চলতে থাকে সারারাত!
এ ঘটনায় সেই নারী চিকিৎসক খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। সকাল ০৭.৩০ এর দিকে চিকিৎসক টয়লেটে যাবার উদ্দেশ্যে দরজা খুললে তারা তার পিঁছু নেয় এবং আবারও হয়রানির চেষ্টা করে। তখন নারী চিকিৎসক ভয়ে সজোরে চিৎকার করলে তারা চলে যায়। সেদিন সকালেই তিনি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে বিষয়টি জানান এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষ তার কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে নারী চিকিৎসকের সহকর্মীরা কতৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। পরবর্তীতে কতৃপক্ষ এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নিজ উদ্যোগে খোঁজ নিলে এই দুই ওয়ার্ডবয়ের নামে করোনা ইউনিটে প্রচুর চাঁদাবাজির প্রমাণ পান। তারা বিভিন্ন করোনা রোগীকে অক্সিজেন প্রদান, ঔষধ সরবরাহ, অবৈধভাবে রক্ত বিক্রয় বাবদ রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছে। এটা শুধু তারাই নয়, বরং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দিনের পর দিন এই অরাজকতা চলে আসছে। অনেকে জানতো এই সিন্ডিকেটের কথা, কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলে নি তাই এই খবরাখবর কতৃপক্ষের কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি এতদিন।
পুরো ব্যাপার জানার পর হাসপাতাল কতৃপক্ষ ওয়ার্ডবয়দের বিপক্ষে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহনের সিদ্ধান্ত নিলে বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে তথাকথিত সেই সিন্ডিকেটের অন্যান্য কর্মচারীরা।