ডা.মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
পৃথিবীর গঠনের মতই আমাদের দেহের শারীরিক গঠন। আমাদের দেহের শতকরা ৬০ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। দেহের সমস্ত জৈবিক ক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্যে পানি পান অপরিহার্য, এবং তা অবশ্যই জীবানুমুক্ত। জীবাণুমুক্ত পানি মানেই ফুটানো পানি, এবং আমরা সবাই সেই ফুটানো পানি পান করে থাকি। তবে কারো কারো ধারনা বোতল জাত মিনারেল ওয়াটার জীবানুমুক্ত, সেটা মোটেই ঠিক নয়। কারন কোম্পানী কি পদ্ধতিতে বোতলজাত করে সেটা আমাদের পক্ষেই যাচাই করা সম্ভব না। আর যাচাই না করে জীবন কে ঝুঁকিপূর্ণ করা বুদ্ধিমানের কাজ না। তাই ফুটানো পানির বিকল্প নেই।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, পানি পান করি তবে পানি পান করার উপযুক্ত সময় কোনটি? আসলে পানি পানের উপযুক্ত সময় বলে কথা নেই, সুযোগ থাকলে সব সময়ই পান করা উচিৎ । অনেকে আবার এও বলেন, আমি সকালে উঠেই খালি পেটে এক কাপ চা বা কফি খাই। আবার অনেকে আছেন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে আগে দুই গ্লাস পানি পান করেন। সকালে এই চা বা কফি পান ভালো, নাকি পানি পান ভালো? এনিয়ে অনেক ভুল ধারনা প্রচলিত আছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মুখ না ধুয়ে, কুলি না করে চা পান কে বলে বেড টি। এই বেড টি ভালো অভ্যাস নয়। এটি পরিহার করা উচিৎ। সকালে মুখ না ধুয়ে বা কুলি না করে খালি পেটে বেড টি খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। প্রথম কথা হলো সকালে যাই খেতে হয়, আগে কুলি করে নিতে হয়, হাত মুখ ধুতে হয়। কারন সারারাত মুখে ভিতর লালাতে প্রচুর জীবানু জমতে থাকে। তাছাড়া দীর্ঘ ঘুমের মধ্যে অজান্তে হাত, আংগুল পরিস্কার থাকাটাও অস্বাভাবিক। তাই সকালে উঠেই প্রথম কাজ হাত মুখ ধুয়া নেয়া। তারপর প্রধান কাজ এক গ্লাস বা দুই পানি পান করা। এতে শরীরের ভিতর ঠান্ডা হয়, আদ্রতা পায়।
সকালে দু’গ্লাস পানি এসিডিটি কমায়:
ঘুমের মধ্যে সারারাত পাকস্থলীতে এসিড জমতে থাকে এবং তা ধীরে ধীরে খুবই ঘন হয়। এই ঘন এসিডে অনেক সময় এসিডিটি হয়, হার্ট বার্ন হয়। পানি পানে সেই এসিশিটি কিছুটা ঘনত্ব হারায়। ফলে তাতে পাকস্থলীর জন্যে একটা উপকারী পরিবেশ তৈরি হয়। হার্ট বার্ন, এসিডিটি হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। কিন্তু এই পানির পরিবর্তে কফি, চা বা জুস পান উল্টোটাই করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে খালি পেটে বাসি মুখে চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করা উচিৎ।
পানি পানে কোষ্ঠকাঠিন্য সারে:
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগটি মুলত হয় পানি কম খাবার কারনে। শরীরে জল থাকে কম, ফলে মল হয় শক্ত। এটাই বেসিক কথা। সুতরাং সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান, শরীরে আদ্রতা ফিরিয়ে দিবে সেই সাথে কোষ্টকাঠিন্যও দূর করবে।
পেটভর্তি খাবার খাওয়া বদ হজমের প্রধান কারন। তাছাড়া এ থেকে কালক্রমে হাইপারটেনশন, ডায়বেটিস, হাই কোলেস্টেরল, এসিডিটি হওয়া মামুলী বিষয়।
অনেকে অসময়ে প্রশাব এড়াতে খুব কম পানি করেন বা মোটেই পানি পান করেন না। সেটাও ঠিক না, এতে কালক্রমে নানান কিডনি রোগের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পানি পানের পর সেই পানি শরীরের অন্ত্রকে ধুয়ে পরিস্কার করে, রক্তের সমস্ত বর্জ্য কে সাথে নিয়ে দু থেকে চার ঘন্টা পর শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সুতরাং সেই সময়টি হিসাব রেখেই প্রয়োজনে পানি করা যেতে পারে।
শরীর কে সুস্থ রাখতে, আদ্র রাখতে, দেহের অন্ত:পরিবেশের জৈবিক ক্রিয়া কলাপের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে, নিজ অফিস আদালত বা কর্মস্থলে সব সময় দুই লিটার সুপেয় খাবার পানি সাথে রেখে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী।
পানি পানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
সকালে খালিপেটে দু’গ্লাস পানি পান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া জাপান মেডিকেল সোসাইটির মতে খালি পেটে পানি পানে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, হার্টের অসুখ, মৃগী রোগ, এজমা, মেনিনজাইটিস, ডায়বেটিস, পেটের পীড়া ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
ত্বক সুন্দর মোলায়েম রাখতে পানি পান:
প্রচুর পানি পান শরীর থেকে দুষিত পদার্থ (টক্সিন) বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে এতে দেহের ত্বক সুন্দর ও মোলায়েম থাকে। তাছাড়া কফি বা চায়ের পরিবর্তে দু’ গ্লাস পানি পান আপনার হার্ট কে সুস্থ চাঙ্গা রাখে। তাছাড়া পানি পান শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে, কারন পানি পান করলে পাকস্থলী পূর্ন থাকে এতে অন্য খাবার খাওয়া কম হয়।
ভাত খাবার সময় পানি পান:
অনেকে আবার প্রশ্ন করেন, খাবার সময় পানি খাওয়া উচিৎ কিনা? অবশ্যই খাবার সময় পর্যাপ্ত পান হজমের জন্যে সহায়ক। গলায় খাবার আটকে যাওয়া, বমির ভাব হওয়া, তেতা ঢেকুর ঊঠা (এসিডিটি) এসব জটিলতা এড়াতে খাবারের মাঝে মাঝে পানি পান জরুরী উচিৎ। খাবার মধ্যে খানে ও খাবার শেষে পানি পান খাবার খাওয়ার পর একটা তৃপ্ততা এনে দেয়। খাবার গ্রহনের সময় তিনবার পানি পান রাসুলুল্লাহ সাঃ সুন্নত। উদরপূর্তি করে কেবল ভাত খাওয়া বদ হজম বা পেটের পীড়ার প্রধান কারন।
লেখক পরিচিতিঃ
ডা.মোহাম্মদ সাঈদ এনাম
ডিএমসি,কে-৫২
সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন