প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ জুন, ২০২০, শুক্রবার
জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত দুইদিনে একটা ঘটনা বেশ প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে।
সময়ঃ ২৪ জুন, ২০২০
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নোয়াখালী
রাত এগারোটায় পিপিই পড়ে হাসপাতালের নিচে নামেন ডা. নিজাম উদ্দীন। দেখেন, সামনের রাস্তায় এক কিশোর তার নিথর বাবাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে সবার সাহায্য চাইছে, কিন্তু কেউই সাহায্য করছে না।
ডা. নিজাম নাড়ি পরীক্ষা করে পালস না পাওয়ায়, দ্রুত রোগীকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে সিপিআর দেওয়া শুরু করেন। কিছু সময় পরে পালস পেলেন। রোগীকে বাঁচানোর জন্য এরপরও সিপিআর দিচ্ছিলেন তিনি। সারাদিনের ক্লান্তির সাথে শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ায়, এক সময় আর সিপিআর দিতে পারেন না ডা. নিজাম। তিনি থেমে যেতেই কিশোর ছেলেটা দায়িত্ব নেয়। পাশ থেকে দেখে শিখে নিয়েছে কীভাবে সিপিআর দিতে হয়।
ছেলেটার পাশে বসে রোগীর দিকে নজর রাখছিলেন এই চিকিৎসক। হঠাৎ করেই রোগীর চোখ স্থির হয়ে গেলে দ্রুত পালস চেক করলেন, পালস নেই। ছেলেটার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন ডা. নিজাম উদ্দীন।
অনেকদিন আগের আরেকটা ঘটনা-
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পেটব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া একজন মুমূর্ষু রোগী মারা যান। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু- এই অভিযোগে চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলা করে রোগীর স্বজনরা। এই হামলায় কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত হন, যিনি রোগীকে বাঁচানোর জন্য শেষ পর্যন্ত সিপিআর দিয়েছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত চিকিৎসককে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন রোগী জানান,
“ওই রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না। এক সাথে কয়েকজন ডাক্তার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল তাকে বাঁচানোর। চিকিৎসার কোন গাফেলতি চোখে পড়ে নাই।”
চিকিৎসকদের সাথে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া এরকম ঘটনাগুলো স্মরণ করে চিকিৎসক পুলক মন্ডল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি লিখেন,
দুটো ছবি।
দৃশ্যপট একই।
সময় টা ভিন্ন।প্রথমটা দুইদিন আগের নোয়াখালীর ছবি, দ্বিতীয়টা বছরখানেক আগের ছবি।
মুমূর্ষু রোগী বাঁচাতে গিয়ে, সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে CPR দিয়েও রোগী বাঁচাতে পারলেন না চিকিৎসক।
প্রথম ছবিটি প্রশংসায় ভাসছে, আর দ্বিতীয় ছবিটি ‘বুকে চাপ দিয়ে রোগী’ মেরে ফেলার অপরাধে ডাক্তারের রুমের এই অবস্থা করেছে রোগীর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ডাক্তারের অবস্থা তো আর নাইবা বললাম।
স্মৃতিচারণ!