সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোড়ন ফেলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের নাটক বন্ধুবৃত্ত। আগেই ইউটিউবে নাটক অনেকে দেখলেই চ্যানেল আই এর পর্দায় নাটকটি দেখে সবার মনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন নিজের মতামত জানিয়ে। প্রশংসায় ভেসে যাচ্ছেন নাটকের কুশীলবরা।
চিকিৎসক এবং মেডিকেল স্টুডেন্টদের কাছে নাটকটি ছিল আবেগের। কারণ তাদের জীবনকেই আয়নায় দেখানো হয়েছে এই নাটকে।
অয়ন দাস লিখেছেন, “সাদা অ্যাপ্রনের মানুষগুলোর কাজ শুধু ‘রোগী বাঁচানো’ নয়; মানুষের ষষ্ঠ মৌলিক চাহিদা পূরণেও তারা সক্ষম-টেলিছবিটি তার জ্বলন্ত উদাহরণ! ”
ডা অনির্বাণ সরকারের মতে, “প্রথমেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছোট ভাইবোনদের অভিনন্দন জানিয়ে নিই।
ব্যাপারটা হয়েছে কি, বেশ ক’দিন ধরেই নিউজফিডে দুষ্টু, মিষ্টি, সিরিয়াস ঢাকা মেডিকেলের পোলাপানদের দেয়া খবরে জানতে পারছিলাম তারা একটি টেলিফিল্ম বানিয়েছে, যেটি চ্যানেল আইয়ে ঈদের দিন সকালে প্রচারিত হবে। তা এ নিয়ে আমার মোটেই আগ্রহ ছিলো না, কারণ ঈদের নাটকের নামে ভাঁড়ামো দেখা বহুত আগেই ছেড়ে দিয়েছি। আর এরা তো মেডিকেলের ছাত্রছাত্রী, এমেচার শিশু, এরা কি আর এমন করবে?
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় সিভিল সার্জনের আদেশে এবার ঈদ ডিউটি করতে এসেছি, পুরো উপজেলায় আর ডাক্তার নেই। ঈদের দিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পর রাউণ্ড দেয়া শেষে টিভি খুললাম, শুরু হলো ‘বন্ধুবৃত্ত’ নামের ঐ নাটক।
শুরুতে নাটকটা বিশ্রী লাগছিলো; প্যাচপেচে অভিনয়, মাত্রাতিরিক্ত আবেগ, কৌতুক- কিছুই আকর্ষণ করেনি।
হঠাৎ মনে হলো- আমি এই নাটকে পেশাদারিত্ব খুঁজছি কেন? এ তো বাড়াবাড়ি। বরং গল্পটাই অনুসরণ করা যাক। স্মৃতির মেঘে ভেসে নিজেকে নিয়ে গেলাম মেডিকেল কলেজের প্রথম দিনের আঙিনায়, আর তখনই মনে হলো টিভি পর্দায় আমি নিজেকেই দেখতে পাচ্ছি । এদের তুচ্ছ বিষয়ে মজা পাওয়ায় যখন বিরক্ত হবো হবো করছি, তখন মনে পড়ে যাচ্ছে ঐ বয়সে আমরা কি সব হাস্যকর কাণ্ডকীর্তি করেছি। আর বিরক্তি আসেনি।
পরিচালককে আমি গভীর ধন্যবাদ দেবো তিনি নাটকের ব্যাপারে আমার মতো নাক-সিঁটকোনো লোককে খুব ধীরে ধীরে নাটকের কাহিনীর ভেতরে নিয়ে গেছেন। তিনি অভিনয়ের উঁচুমান দেখাতে চাননি, গ্ল্যামার দেখাতে চাননি, তিনি একটি কাহিনী বলতে চেয়েছেন, যে কাহিনী মেডিকেল কলেজের নিজস্ব, নিজস্ব হয়েও সাধারণ্যে আবেদন সৃষ্টিতে সক্ষম, জীবনরসে ভরপুর, হৃদয়গ্রাহী এবং প্রাণবন্ত।
এই নাটক, নাটক না বলে জীবনের প্রতিবিম্ব বলাই সঙ্গত যাকে, আমাকে স্মৃতিমেদুর করে নিয়ে গেলো সেইসব দিনগুলিতে, যখন মেডিকেল কলেজে নাট্যসংগঠন করতাম, এককালে যে সংগঠনের সহ-সভাপতি পদও পেয়ে গিয়েছিলাম বানরের গলায় মুক্তোর মালা পাবার মতো করে, আর যেসব দিন আমার মেডিকেল জীবনের উজ্জ্বলতম পর্ব হয়ে আছে, থাকবে।
পিক আওয়ারে ‘বন্ধুবৃত্ত’ প্রচার হলে খুশি হতাম, এমন সময়ে প্রচার হয়েছে এটি, যখন অনেকেরই এটি দেখার সু্যোগ ঘটেনি। আর আমার ঈদ-দুঃখ এই-কতকগুলো অপোগণ্ড ঈদের দিনে মারামারি করে হাসপাতালে আসাতে আমি ‘বন্ধুবৃত্ত’ পুরোটা দেখতে পারিনি।
শেষ কথা এই- ভ্রু কুঁচকে দেখতে বসলে এ নাটকে অভিনয়, পরিচালনা, লাইটিং, এডিটিং, আবহ সঙ্গীতে অজস্র ভুল ধরা সম্ভব। কিন্তু আমি তা করতে বসিনি এবং এ নাটকে আমি বহু, বহুদিন পর নিজেকেই খুঁজে পেয়েছি। নিজের মুখোমুখি করেছে ‘বন্ধুবৃত্ত’ আমাকে।
টুপি খোলা অভিনন্দন ঢাকা মেডিকেল কলেজকে, এবং নাটকের সাথে জড়িত প্রতিটি এমেচার, অথচ জীবনশক্তিতে ভরপুর ভাইবোনকে।”
কানিজ ফাতেমা ফ্লোরা লিখেছেন, “আমার বড় বোন কয়েক বছর আগে এই নাটকের ভাইয়া আপুদের মত সময় পার করে এসেছে। ওকে বললাম, নাটকটা দেখ! ও তেমন পাত্তা দিল না। আমি বললাম, আগেও দেখেছি আমি, হেসে কেঁদে একাকার হবি। ও দেখছে এখন। আইটেম, ভাইভার প্যারা, মেডিসিন ওয়ার্ডে ক্রাশ খাওয়া দেখে ও হাসতে হাসতে কুটিকুটি। কারণ ওর উপরেও এমন এক স্টুডেন্ট ক্রাশ খেয়েছিল। আর সাথে ‘ তোর জন্য আমি বন্য’ গানটার এক্সিকিউশন দেখে আমার বোন আর আমি দ্বিতীয়বারের মত হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। আম্মু এসে বলছে, কি রে ! হল টা কি !
সো, যেহেতু, তোমরা এভাবে দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেতে পেরেছ, তোমরা সারথক নিঃসন্দেহে। ”
জান্নাতুল মাওয়া জান্নাত লিখেছেন, “রিভিউ একটা দিয়েই দিই। কাল রাতেই বাসার সবাইকে বলছি আজ যেন ১১ টার
মধ্যে ফ্রি হয়।দেন নাটক দেখতে বসলাম,আম্মু, আব্বু ,চাচীরা,কাজিনরা সবাই এক সাথে। মেয়ে মানুষ যদি বলে,স্টার জলসার নাটক এর চাইতেও অনেক বেশী ভাল লাগল,তাহলে কি অার নাটক ক্যামন তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে? বাসার সবাই যখন নাটক দেখা শুরু করেই পাড়ার সবাইকে ফোন করে বলে,ঢাকা মেডিকেল এর নাটক হচ্ছে সবাই দেখো,তখন মনে হচ্ছিল হার্টবিট বেড়ে গেছে আনন্দে।
আর যখন পাড়ার প্রত্যেকটি টং দোকানে হিন্দি সিরিয়াল,সিনেমার পরিবর্তে সবাই আমার ক্যাম্পাসের নাটক দেখে তখন কি আর প্রশ্ন থাকে নাটক নিয়ে??? সত্যি কথা বলতে আমার এলাকার লোকজনদের ধারনা এরা সবাই প্রফেশনাল,অার নাটক এ নতুন এসেছে। অনেকে বলতেছে কি রে তোক কলেজে নায়ক, নায়িকারাও পড়ে??? আমার সহজ সরল উত্তর,আজ তো টেলিমুভি দেখলেন,কয়েকদিন পরে সিমেনাও আসবে আর শেষ দৃশ্যের কথা কি আর বলবো,আমার মা চাচীরা তো কান্নাকাটি করে ভাসায় দিল
কে-৬৭ ভাইয়া আপুরা অনেক ধন্যবাদ আপনাদের এতো সুন্দর একটা নাটক উপহার দেয়ার জন্যে”
কে ৬৭ ব্যাচের অনিক অন্যরকম লিখেছেন, “দেখা নাটক তবু কেমন একটা অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।
আমাদের র্যাগ ডে তে যখন প্রথম নাটকটা দেখি তখনো এতোটা ফিল করি নাই।
গত পাঁচটা বছরের কথা ভেবে খুব নস্টালজিক লাগছে।
আজ থেকে দশ বছর পর যখন ডিএমসি ক্যাম্পাসে আসবো। কেমন লাগবে তখন?
( নিয়মিত প্রক্সি দিয়ে আমার মত ফাঁকিবাজ কে সবগুলো প্রফে ফার্স্ট ক্লিয়ারেন্স পাইয়েছে যারা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা)”
আকাব খান লিখেছেন, “অনিক মারা যাওয়ার পর DMC তে আসিনা আমরা অনেক দিন। এই যায়গাটা আমাদের জন্য একটা কষ্টের যায়গা।-কথাগুলো খুব হার্ট টাচিং। এমনটা যেনো কখনো না হয়। আমার দেখা একটা সেরা নাটক।”
নয়ন সাহা লিখেছেন, “অসাধারণ। তুলনা হয় না। সত্যি অসাধারণ। বন্ধু ছাড়া লাইফ অচল। ঠিক প্রিয় বন্ধুটিকে হারানো আরো অনেক বেদনার।”
তবে এডিট করাতে অনেকে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন। মোহাম্মদ আরাফাত বলেছেন, “এডিট করে নাটকের মজাটাই কমিয়ে দিয়েছে। আর এড গুলো আরো বিরক্তিকর।
সঙ্গীতা চৌধুরী বলেছেন, “সরি টু সে,চ্যানেল আই কী ছাতার ডাবিং করছে বুঝতেছিনা! সাউন্ড কোয়ালিটি আগের চেয়ে বেশ খারাপ হইছে!অনেকগুলো সিন কাটা গেছে।সিকোয়েনস ব্রেকের গন্ধ পাচ্ছি।এজ এ রেজালট,অনেককিছুই খাপছাড়া হয়ে গেছে।অবশেষে সহ্য করতে না পেরে উঠেই গেলাম!
আর, আমার কাছে থাকা ডাবিং কাটিং এডিটিং লেস ফ্রেশকপি নাটকটাই দেখতে বসলাম! স্বকীয়তা ইজ স্বকীয়তা!”
মোহাম্মাদ আসাদুল্লাহ কারণটা বলেছেন, “কাট-ছাট চোখে লাগছে কারন এই নাটক দেখতে দেখতে সেকেন্ড বাই সেকেন্ড মুখস্ত । তারপর ও ভালো লাগছে ।”
অগ্রজদের এই কাজ দেখে অনুজরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন এমন কাজ করতে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে ৬৯ ব্যাচের রাজেশ সিংহ মিথুন ফেসবুকে লিখেছেন, “আমরাও করতে চাই এমন একটা নাটক। কে-৬৯ আওয়াজ দাও।” সেখানে সিনিয়র ব্যাচের একজন বলেছেন, “কোন চরিত্রে সিনিয়র কাউরে লাগলে আগেই আওয়াজ দিয়া রাখলাম।” রাজেশ পাল্টা উত্তরে জানান, “গল্প তৈরী। আরো ভালো গল্প পেলে জানাও।অনেক বছর ধরেই মঞ্চ নাটক নিয়ে কাজ করলাম। কিন্তু, টিভি নাটকের মাহাত্ম্য অন্য লেভেলের। দরকার আগ্রহ সবার।”
সিফাত খন্দকার লিখেছেন, “নাটকটা ইউটিউবে বেরোবার পর সবচেয়ে বেশী যে প্রশ্নটা শুনেছি, ‘অনিক ছেলেটা আসলেই ভাল আছে তো?’ লোকে শুরুতে হো হো করে হাসার সময় টের ই পায়নি শেষে কাঁদতে হবে।
অসাধারন একটা প্যাকেজ। আমার কোন শব্দের যোগ্যতা নেই মূল্যায়ন করার। ”
নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শুভ তালুকদার লিখেছেন, “এই নিয়ে চতুর্থবার দেখলাম নাটকটা। এক কথায় অসাধারন। ইমপ্রেস টেলিফিল্মে গিয়েছে, এতেই প্রমানিত হয় কতটা মানসম্মত হয়েছে এটি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখছিলাম আজ। প্রতিটি ঘটনা যেন নিজের জীবনের আয়না হিসেবে দেখলাম। এই ঘটনাগুলো নিত্য ঘটে যাচ্ছে প্রতিটা মেডিকেল স্টুডেন্টদের জীবনে। আমি চোখ বুজে বলে দিতে পারি, একজন নন মেডিকেল মানুষ এই নাটকটি দেখলে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবে একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের লাইফ আসলে কিরকম। ক্যামেরার সামনের এবং পিছনের সকল কলাকুশলীকে অনেক অনেক অভিনন্দন, চ্যানেল আইতে প্রচার হলো-তার চেয়েও আপনাদের বড় অর্জন মনে হয় এটাই যে, বাংলাদেশের প্রতিটা মেডিকেল স্টুডেন্ট আপনাদের এই নাটক ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে অত্যন্ত গর্বের সাথে। আপনাদের এই প্রাপ্তিটুকুর অংশীদার আমরা সবাই। তাই নয় কি?
সবাইকে আবারো ঈদ ও রথোৎসবের শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ভালবাসা সবার জন্য।”
নাটকটিতে দেখানো হয় অনিক রহমান নামে এক মেডিকেল স্টুডেন্টের মৃত্যু। মৃত্যুর কারণ লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার। অনিকের মৃত্যু দেখে অনেকেই কান্নাকাটি করেছেন। আসলে নাটকটা সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন এই ঘটনাটা বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে ৬৪ ব্যাচের ডা সাজ্জাত উদাস বলেন, “আমরা ডিএমসিয়ানরা তো নিশ্চয়ই দেখেছি, আমি জানি ডিএমসির বাইরেও অনেকেই ‘বন্ধুবৃত্ত’ দেখছে আজ। নাটকটার শেষে নায়ক অনিকের মরে যাওয়াটা কিন্তু শুধুই গল্পের প্রয়োজনে নয় বরং বাস্তবতার আলোকে। আমাদের ডিএমসির কে-৬২ ব্যাচের তন্ময়দা, কে-৬৫ ব্যাচের শান্তাকে আমরা হারিয়েছি লিউকেমিয়ার কারণে। আমাদেরই কে-৬৪ ব্যাচের লুবনা এখন ভারতে অবস্থান করছে কেমোথেরাপি নেয়ার জন্য হজকিন্স লিম্ফোমাতে আক্রান্ত হয়ে। কাছের মানুষ হারানোর বেদনা কি আমরা জানি ভাল করেই। তন্ময়দা আর শান্তাকে আমরা ধরে রাখতে পারি নাই আমাদের মাঝে কিন্তু লুবনাকে আমরা ফিরিয়ে আনবই ইনশাআল্লাহ্। ”
কে ৬২ ব্যাচের ডা ফয়সাল মামুন লিখেছেন, “বন্ধুবৃত্ত- শুধু ক্যাম্পাস, মেডিকেল লাইফ, হল লাইফ কেই মনে করিয়ে দেয়নি, মনে করিয়ে দিল হারিয়ে যাওয়া একজনকেও!!! জীবনের ব্যাস্ততায় প্রায় ভুলে গেছিলাম তোকে তন্ময়, আমরা তোকে বাঁচাতে পারিনি….. তবে ৬২ এর একজন হয়ে, আমাদের বন্ধু হয়ে তুই আমাদের মাঝেই থাকবি চিরদিন!!!!”
আরেকজন লিখেছেন, “আমি আগেই বলেছিলাম এটা কোনো গল্প না এটা জীবনের গল্প।”
ডা হাবিবুল হাসান সৌরভ লিখেছেন, “অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালাম। ”
ফয়সাল বলেছেন, “এতোটা দিন নিজেকে শক্ত মনের মানুষ হিসেবেই জানতাম। কিন্তু আজ “বন্ধুবৃত্ত” দেখার পর বুঝলাম আমি শক্ত মনের মানুষ না। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছে!!”
ডা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম উজ্জ্বল লিখেছেন, “ভেবেছিলাম ভুলে যাব,ভুলে যেতে পারব,কিন্তু না।মনের ক্ষতটা এখন তেমনি আছে।বন্ধুবৃত্ত নাটকটা শেষ করতে পারিনি, তার আগেই হাউমাউ করে কান্না করেছি।কারনটা বলছি।তখন সবে ফাইনাল প্রফের রেজাল্ট দিয়েছে।একদিন রাত ১১টায় বন্ধু জামিল (কে ৫৮) ফোন করে বললো রাজ্জাক আর নেই। সুইসাইড করেছে। বিশসাস করতে পারছিলাম না।আমাদের ব্যাচের আইকনের মত,এত প্রানবন্ত রাজ্জাক আর নেই।পরদিন মরগে গেলাম।দেখলাম গভীর প্রশান্তিতে চীরনিদ্রায় শায়িত।মুহুরতের জন্যে বোধহীন হয়ে গেলাম।এরপর কেটে গেছে ১০ বছর।ভেবেছিলাম ভুলে গেছি।কিন্তু না।ক্ষতটা এখনো কাচাই রয়ে গেছে।ধন্যবাদ কে ৬৭।তোমরা সুন্দর নাটক বানিয়েছো।আর আমরা হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করেছি।রাজ্জাক তুই যেখানেই থাকিস, আল্লাহ তোকে অনেক অনেক ভাল রাখুক।আমীন।”
ডা মাসরুর রহমান আবীর লিখেছেন, “সেই ফেলে আসা ছাত্রজীবন, প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয়তর হোস্টেল জীবন, আর বিশেষ করে প্রিয়তম বন্ধুদের বন্ধুত্ব নিয়ে এক ধাক্কায় অনেক অনেক কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কে-৬৭ ব্যাচের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ! ”
সালমান আবির লিখেছেন, “সত্যিই কেদে ফেললাম “বন্ধু বৃত্ত ” দেখে!!! সালেহ তিয়াস ভাই,আপনার ক্রিয়েটিভি সত্যিই চোখে জল এনে দিল, চ্যানেল আই মেডিকেল স্টুডেন্টদের জীবন নিয়ে যে এমন টেলিছবি উপহার দিবে, ভাবতে পারিনি।
নাটকের অভিনয় করা এত্ত ভাইয়া আপুদের মেনশন করতে পারলাম না, শুধু বলি অসাধারণ, ১ম বর্ষকে মিস করতেছি আজ। বড় হয়ে গেলাম একটু। ”
নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রীরাও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সামিয়ান সাবির লিখেছেন, “হ্যাপিনেস ইজ আম্মাজান, বোন ও ভাগ্নি কুল এর সাথে বসিয়া নিজেকে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় আবিষ্কার করা।ঈদ এট ইটস বেস্ট। ”
সুইটি দাশ লিখেছেন, “চ্যানেল আই তে তোমার নাটক দেখাচ্ছে।আমাদের আগে জানাও নি কেন??আত্মীয়স্বজন অনেকেই দেখে ফোন দিয়ে এ কথাই বলছে।আসলে সারপ্রাইজ দিতে আমার খুব ভালো লাগে তাই কাউকে জানায় নি।”
পরিচালক রাগিব শাহরিয়ার রাতে ফেসবুক এ লেখেন, “র্যাগ ডে উপলক্ষে বানানো আমাদের ছোটখাট নাটকটাকে যারা তাদের প্রচন্ড ভালবাসা দিয়ে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আর নাসে সায়েম, শুধু এই দুইজন মিলে গুটি গুটি করে সাত মাস ধরে এই নাটক বানাই। একজন ক্যামেরা ধরি, আরেকজন মাইক্রোফোন, একজন শুটিং প্লেস সাজাই, আরেকজন ক্যামেরা ঠিক করি,এডিটিং এর সময় একের পর এক কেটে যায় নির্ঘুম রাত, প্রচন্ড কষ্টে প্রত্যেকদিন একবার করে প্রতিজ্ঞা করি এই শেষ, এইসব আর না। সব কষ্ট কেটে যায় ফেসবুক বা ফোনের মেসেজে আসা মানুষের ভালবাসা পেয়ে। আল্লাহ তায়ালা এক জীবনে তার পাপী বান্দাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছেন, আমি এর প্রাপ্য ছিলাম কি না জানি না। অনেকে হয়তোবা অনেক আশা নিয়ে দেখতে বসে টিভি নাটকের স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আমাদের নাটকটাকে মেলাতে যেয়ে হতাশ হয়েছেন। ঈদের মত দিনে ২ ঘন্টা নষ্ট করার জন্য আমি দু:খিত। ২ জন মিলে এর চাইতে বেশি কিছু সম্ভব ছিল না। আর আমাদের স্বপ্নটাও এত বড় ছিল না নাটক বানানোর সময়। আমাদের ব্যাচের ২০০ জন বন্ধু আমাদের নাটক দেখে একটু হাসবে, র্যাগ ডের দিনে অতীতের কথা ভেবে একটু মন খারাপ করবে, শুধু এতটুকুই ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন এর অতীত ঘটনা ব্যাখাতীতভাবে আমাদের জীবনে ঘটেছে। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল আমাদেরই হয়নি, আপনাদের কথা আর কি বলব। “গল্পটা বন্ধুত্বের” অথবা “বন্ধুবৃত্ত” এই নাটকের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কছিন্নের দিন আজ। গত দেড় বছর আমরা কোননা কোনভাবে এই নাটকের সাথে যুক্ত। বিদায়টা খুব ভালভাবে হল, এই আমাদের খুশি। ধন্যবাদ সবাইকে। আজকের মতই আনন্দপূর্ণভাবে কাটুক সবার বাকিটা জীবন। জীবন হোক বন্ধুর ভালবাসায় পরিপূর্ণ।”