২৬ জানুয়ারি, ২০২০
হাম এবং রুবেলা দুটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির মাঝে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ দুটি অতি দ্রুত ছড়ায়। হাম যেকোনো বয়সে হলেও শিশুদের মাঝে এর প্রকোপ অত্যন্ত বেশী দেখা যায়। হামের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এনকেফালাইটিস, অন্ধত্ব, কানপাকা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে মারাত্মক অপুষ্টি এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। অপরপক্ষে গর্ভবতী মায়েরা গর্ভের প্রথম তিন মাসের সময় রুবেলা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মা থেকে গর্ভের শিশু আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভের শিশু মৃত্যু, গর্ভপাত হতে পারে বা গর্ভের শিশু জন্মগত জটিলতা যা কনজেনিটাল রুবেলা সিন্ড্রোম নামে পরিচিত, নিয়ে জন্মাতে পারে। উভয় রোগেই শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বেশী। এই রোগদুটির প্রকোপ থেকে সুরক্ষার অন্যতম উপায় হলো শিশুদের সঠিক সময়ে টিকাদান। পূর্বে হামের জন্য আলাদা ডোজের টিকা দেয়া হলেও ২০১২ সাল থেকে রুবেলা নিয়ন্ত্রণে হামের টিকার সাথে রুবেলা টিকা সংযোজন করা হয়। ইপিআই (EPI) কর্মসূচী অনুযায়ী ৯ মাস বয়সী সকল শিশুদের প্রথম ডোজের এমআর টিকা ও ১৫ মাস বয়সী সকল শিশুর দ্বিতীয় ডোজের এমআর টিকা দেয়া হয়।
২০১৪ সালে প্রথম হাম ও রুবেলা দূরীকরণে এমআর ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে এ রোগ দুটির প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমে যায়।
কিন্তু নিরক্ষণ তথ্যানুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব আবার বাড়তে শুরু করে। হাম রোগের বিস্তার বন্ধ করার লক্ষে তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থায়ন ও Gavi এর সহায়তায় সারাদেশ ব্যাপী হাম-রুবেলার ক্যাম্পেইন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমআর ক্যাম্পেইন এর আরেকটি উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা।
এমআর ক্যাম্পেইনঃ এমআর ক্যাম্পেইন প্রথম বার পরিচালনার পর ২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী হামে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো প্রতি দশ লাখে ১.৬ জন যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেড়ে দাড়ায় ২৫ জনে। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচীর উপর জোরদারের পরেও এখনো এমআর প্রথম ডোজ টিকার ক্ষেত্রে ৫-১৫ % শিশু এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকার ক্ষেত্রে ১৫-২০% শিশু ড্রপ আউট থেকেই যাচ্ছে। অরক্ষিত এই শিশুদের সংখ্যা কমানো এবং জনসুরক্ষা বৃদ্ধির লক্ষে ৩-৪ বছর পরপর এমআর ক্যাম্পেইন পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। নিরক্ষণ তথ্য ২০১৮ অনুযায়ী দেখা গিয়েছে হাম-রুবেলা আক্রান্ত ৭৯ ভাগ শিশুদের বয়সই ১০ বছরের নিচে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) হাম ও রুবেলা দূরীকরণের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা বাস্তবায়িত হবে ‘হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন ২০২০ ‘ এর মাধ্যমে।
এমআর ক্যাম্পেইন ২০২০ এর উদ্দেশ্যঃ
-৯ মাস থেকে ১০ বছরের নিচে সকল শিশুকে ১ম ডোজ এমআর টিকাদানের মাধ্যমে হাম-রুবেলা রোগের বিস্তার দ্রুত হ্রাস করা।
-২ বছর বয়সের নিচে সকল ড্রপ আউট ও লেফট আউট শিশুদের খুঁজে বের করে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে এমআর টিকাদান নিশ্চিত করা।
এমআর ক্যাম্পেইন ২০২০ এর সময়সূচিঃ
২৯ ফেব্রুয়ারী – ২১মার্চ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।
তিন সপ্তাহব্যাপী চলবে ক্যাম্পেইন এর
১ম সপ্তাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন সময়সূচি :
২৯ ফেব্রুয়ারী – ৫ মার্চ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ
(স্কুল সময়সূচির উপর ভিত্তি করে)
২য় ও ৩য় সপ্তাহে নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রে ক্যাম্পেইন সময়সূচি :
০৭মার্চ -২১মার্চ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ
উল্লেখ্য, শুক্রবার ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত এই ক্যাম্পেইন তিন সপ্তাহ চলবে।ক্যাম্পেইন প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত চলবে।
টিকাদানকারী শেষ টিকা দেয়ার পর একঘন্টা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবশ্যই অপেক্ষা করবেন।
টিকাদান পরিচালনাঃ
১ম সপ্তাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ৪র্থ শ্রেণী বা সমপর্যায়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের ১ম ডোজ এমআর টিকা প্রদান করবে।
গ্রাম এলাকায় ওয়ার্ড ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে টিকাদান টিমের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতি টিমে ২জন টিকাদানকারী ও ৩ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। একজন টিকাদানকারী যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে ১৫০-২০০ শিশুকে টিকা দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানের শিশু সংখ্যা ৪০০ এর অধিক হলে অতিরিক্ত টিকাদানকারী বা টিকাদান টিম এর ব্যবস্থা থাকবে। শিশু সংখ্যার ভিত্তিতে একটি টিকাদান টিম একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ নাজমুন নাহার মীম