সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্তদের

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পূর্বের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৩-২০ গ্রেডের ৭৫৪টি পদের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সরা। একইসঙ্গে পুনরায় অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা। রবিবার (১৬ মার্চ) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা। ছবি- সংগৃহীত

তাদের ভাষ্য, গত ২৬ জুন ২০২৩ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান – বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কয়েকজন প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত নিয়োগ কমিটির নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। যেখানে ৩-২০ গ্রেডভুক্ত বিভিন্ন পদের জন্য ৫৪৪ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কিছু সংযোজন করে এ জনবল সংখ্যা ৭৫৪ জন করা হয়। এ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদের জন্য নিয়োগ কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিকভাবে লিখিত, ব্যবহারিক (কম্পিউটার) ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি অপেক্ষমাণ তালিকাসহ চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম বোর্ড অব গভর্নরস সভায় (৩-৯ এবং ১০-১৫ গ্রেড) এর চূড়ান্ত ও অপেক্ষমাণ তালিকাসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের কাছে একটি সিলড যুক্ত খামে হস্তান্তর করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এ ফলাফল উপস্থাপন ও প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে অধ্যাপক ডা দীন মো. নরুল হক নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরে এ নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে একটি কুচক্রী মহল নানা প্রহসনের আশ্রয় নেওয়া নেয়। অনিয়মের অভিযোগ এনে তারা এ নিয়োগ বাঞ্চালের নিমিত্তে মিছিল, মিটিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার চালানোসহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে ষড়যন্ত্র চালায়। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন দফায় তদন্ত করেও কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাননি। এ কুচক্রী মহলটি শুরু থেকেই এ নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছে যার নমুনা স্বরূপ, লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের পরে তারা উচ্চ আদালতে গত ২৬ অক্টোবর ২৩ তারিখে একটি রিট পিটিশন করে যা উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে খারিজ হয়ে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন (চেয়ারম্যান-শিশু সার্জারি বিভাগ, সিন্ডিকেট সদস্য, সদস্য-বোর্ড অফ গভর্নরস, সুপার স্পেশালাইজড্ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এর নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত করে যার প্রতিবেদনে কোনো অনিয়মের প্রমাণ না থাকায় পরবর্তী সময়ে ব্যবহারিক (কম্পিউটার) ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আরও জানানো হয়, গত এপ্রিল ২০২৪ এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান (প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর-গবেষণা ও উন্নয়ন)-কে সভাপতি এবং অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান (প্রক্টর)-কে সদস্য সচিব করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ১১-০৫-২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম বোর্ড অব গভর্নরস সভায় উত্থাপন করলে বোর্ড অব গভর্নরস এখানে কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতার কথা বলে বিষয়গুলো পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য সুপারিশ করে এবং আরও তিনজন মেম্বারকে যুক্ত করে সর্বমোট সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটি গত ২৪ জুলাই, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সভায় তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। এ রিপোর্টে আগের রিপোর্টের প্রতিটি অস্পষ্ট বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পর্যালোচনা করে লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে সুপারিশ করেন। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার তুমুল যৌক্তিক আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে অবস্থা অনুকূলে না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাটি স্থগিত হয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১২ ডিসেম্বর ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় পুনরায় নিয়োগের বিষয়টি উত্থাপিত হলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অস্পষ্টতার প্রশ্ন তুলে মতামত প্রদান করে পুনরায় তদন্তের সুপারিশ করা হয় যা মূলত উদ্দেশ্য প্রণোদিত, কারণ অধিকতর যাচাই বাছাই সাপেক্ষেই তৎকালীন তদন্ত কমিটি (২৪ জুলাই ২০২৪) দুর্নীতির কোনো প্রকার অভিযোগ না পাওয়ায় ফলাফল প্রকাশের সুপারিশ করে। সেখানে একটি সম্পূর্ণ রূপে সমাধান হওয়া বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্তের সুপারিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই নয়। সিন্ডিকেট সভায় বলা হয় পরপর দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং দুটি কমিটির সভাপতি একই ব্যক্তি। সুতরাং তিনি একই বিষয়ে তদন্ত করে একবার দুর্নীতির প্রমাণ পেলেও পরবর্তী কমিটি দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি। সুতরাং তদন্ত অস্পষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয় কমিটিটি প্রথম কমিটিরই একটি সংযোজন মাত্র। প্রথম কমিটির রিপোর্টে কিছু অস্পষ্টতা আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব গভর্নরস ১১তম সভায় উক্ত কমিটিতে নতুন তিন জন সদস্য নিযুক্ত করেন এবং কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করে সেগুলো সুষ্ঠুভাবে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেন। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৯ ডিসেম্বর ২৪ তারিখে পুনরায় অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ স্যারকে সভাপতি করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ তদন্ত কমিটি পুনরায় তদন্ত করে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করে এবং সিন্ডিকেট মেম্বারদের সম্মতিক্রমে নিয়োগটিকে বাতিল করা হয়।

চিকিৎসক ও নার্সরা বলেন, আমরা সিন্ডিকেট সভার এ প্রহসনমূলক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং প্রয়োজনে পুনরায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি এবং তদন্তে কয়েকটি বিষয় সামনে আশা প্রয়োজন।

১. প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে যদি কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে সে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের কোনো কপি পরীক্ষার আগে কারও কাছে পাওয়া গিয়েছে কি না?

২. যদি প্রশ্ন ফাঁস হয় তবে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে জড়িত প্রার্থীদের কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের প্রমাণাদি পাওয়া গিয়েছে কি না?

৩. ভিডিও ফুটেজের সাথে মেডিকেল অফিসারদের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ যৌক্তিক কি না?

৪. কথোপকথন ও স্ক্রিনশটের এবং মিষ্টি খাওয়ানোর ছবিসমূহ তথ্যাদি পুনঃপর্যালোচনা করা।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগপ্রত্যাশী ডা. কে এম তানভীর, ডা. এ এন জাহিনুল আনাম, নার্স মনির হোসেন ও ডা. রাকিবসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সকল নিয়োগ বাতিল শিরোনামে প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

হাসিনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টার মেয়েকে অবরুদ্ধ করল ছাত্র-জনতা

Sun Mar 16 , 2025
রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা দত্তকে অবরুদ্ধ করেছে একদল ছাত্র-জনতা। রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার ভবনের একটি কক্ষে তাকে অবরুদ্ধ করেন শাহবাগ থানা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo