২৬ মার্চ ২০২০: গতকাল ২৫ মার্চ রোজ বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে “সাধারণ রোগীর চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি প্রদানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ” প্রসঙ্গে এক বিজ্ঞপ্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সকল প্রকার হাসপাতালে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা, জরুরি চিকিৎসা, রোগী ভর্তি ও ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আরো বলা হয়েছে, কোনো হাসপাতাল এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে টহলরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কিংবা থানায় অভিযোগ করা যাবে এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল, লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই বিজ্ঞপ্তি চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সঞ্চার করে।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ যেভাবে অরক্ষিত অবস্থায়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় এরকম একটি আদেশ জারি হওয়া ভীতিকর, অপমানজনক ও জনগণের স্বাস্থ্যের প্রতি চূড়ান্ত উদাসীনতা ও অবহেলার শামিল বলে মনে করেছেন চিকিৎসকরা। উল্লেখ্য, দেশের অধিকাংশ চিকিৎসকের কাছেই এখন পর্যন্ত কোনো সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (PPE) পৌঁছে নি এবং এখন পর্যন্ত ১ জন চিকিৎসক ও ২ জন নার্স কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন, সন্দেহভাজন হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪০ জনেরও অধিক। এভাবে চলতে থাকলে যথাযথ সুরক্ষার অভাবে হাসপাতাল থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে এবং কিছুদিনের মধ্যে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মী আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। উপরন্তু জোরজবরদস্তি মূলক এমন আদেশ পেয়ে চিকিৎসকরা হতবাক হয়ে যান।
উপসচিব রোকেয়া খাতুন স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি লিখিতভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতিতে যাবার প্রস্তাব দিয়েছেন অধিকাংশ চিকিৎসকগণ। জনস্বার্থে এই আদেশ অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
উক্ত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে একজন চিকিৎসক বলেন, “এখানে সত্য বলে পরিচালক ট্রান্সফার হন, চক্ষুশূল হন সেবাদানকারী চিকিৎসকরা। তাই সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন এসব দেখে কষ্টে মুহ্যমান আর হতাশায় বিপর্যস্ত মেধাবী ছাত্র সমাজ এ পথে আর পা বাড়াবে না, হারাবে তারা অন্য কোথাও, ভেঙে পড়বে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা…”
মহামারি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও অযাচিত আদেশ বাতিল করা হবে বলেই জনমনে প্রত্যাশা।
সর্বশেষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে সংশ্লিষ্ট আদেশটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।