সারা বিশ্বে একমাত্র দেশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা কর্মকান্ড ও প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা পরিমাপের স্কোরিং সিস্টেম ও ড্যাশবোর্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশ!
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান এ ধরনের মডেল সারা বিশ্বে এই প্রথম যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দারুনভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ অফিসের ক্যাট-৪ টিমের টিম লিডার ভ্যালেরিয়া জানান এই টুলটি সারা বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। Health System Strengthening Cell এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা.লোকমান হাকিম জানান এ ধরনের টুল ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সমূহের মাঝে প্রতিযোগীতার মনোভাব সৃষ্টি করেছে এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে এবং ইতিমধ্যে MDG লক্ষ্যমাত্রা ৪ ও ৬ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার সূচকের ক্রমান্বয় উন্নয়ন সাধন করে বাংলাদেশ এখন SDG লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এসকল উন্নয়নে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য নীতি নির্ধারকদের ভূমিকা অপরিসীম।বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিভিন্ন প্রতিকুলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে অবদান রাখছে তার মূল্যায়ন করার জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদের পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরী সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগ “স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদারকরণ (Health System Strengthening)” প্রকল্পটি ২০১২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করে আসছে। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১৪ সাল থেকে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী কর্তৃক দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন সূচকে কার্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য পুরষ্কারের প্রচলন শুরু করা হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ সর্বক্ষেত্রে যেমন প্রশংসিত হয়েছে তেমনি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ও প্রতিযোগীতা সৃষ্টি করেছে। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা যেন সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের কাংখিত স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ানো যায়।
ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ সময়ের দাবী। এ দাবী পুরণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বদ্ধপরিকর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) স্বাস্থ্য সেবায় আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেকটাই সফলতা অর্জন করেছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত নানা তথ্য-উপাত্ত DHIS2, HRM, Biometric Attendance System, SMS Complaints & Suggestions System ইত্যাদি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়মিত রেকর্ড করা হচ্ছে। এসব সিস্টেমে প্রদত্ত তথ্য নিয়মিত প্রেরণ এবং প্রেরিত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা জরুরি। এ উদ্দেশ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এর নির্দেশনায় এবং ডা. নাজিমুন নেসা, পরিচালক, এম আই এস এর অধীনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ,আইসিডিডিআর,বি (শেয়ার প্রজেক্ট) ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা পরিমাপ এর জন্য একটি নতুন স্কোরিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে এ বছর। পুরো প্রক্রিয়াটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন ডা. লোকমান হাকিম, উপ পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এম আই এস।
নতুন Performance Measurement Tool বর্তমানে ব্যবহৃত অন্যান্য সফটওয়্যারসমূহের (DHIS2, HRM ইত্যাদি) সঙ্গে সমন্বয় করার ফলে নতুন স্কোরিং পদ্ধতিটি এখন অনলাইন রুটিন ডেটার অংশ হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Health Systems Framework অনুসারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ৬ টি মৌলিক ভিত্তির (6 building blocks) ধারণা অনুসরণ করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আলাদা আলাদা সূচক তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখিত সফটওয়্যারগুলোতে নিয়মিত যেসকল তথ্য দেয়া হয় তা সময়মত ও নির্ভুলভাবে দিলেই প্রস্তুতকৃত একটি সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্কোর তৈরি করবে এবং তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ড্যাশবোর্ডে (Dashboard) দেখা যাবে। টুলটি ডা.লোকমান হাকিমের অধীনে বিশেষজ্ঞ টীমের সহায়তায় তৈরি এবং ফিল্ড টেস্টিং করে এর Validity যাচাই করা হয়েছে প্রতিটি ক্যাটেগরির প্রতিষ্ঠান এর ক্ষেত্রে। ড্যাশবোর্ডটি ইতোমধ্যে অনলাইনে দৃশ্যমান করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ তাদের প্রতিষ্ঠানের মাসিক স্কোর অনুসারে নিজেদের অবস্থান দেখতে পারবেন ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে পারবেন।
নতুন Performance Measurement Tool এর সূচকগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআররবিসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী তৈরি করে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সূচকগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ সিস্টেম ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে তৈরি করা এবং ইনপুট, আউটপুট এবং আউটকাম পর্যায়ে বিভিক্ত করা হয়েছে। উদাহরনস্বরূপ কিছু সূচকের নাম নিম্নে দেয়া হলোঃ
Availability of Major Surgery, Availability of C-Section, Proportion of Functioning Ambulance, Proportion of Functioning X-ray, Timely Submission of Reporting Forms, C-section Rate, Increased OPD visits, No. of SMS Complain/Suggestion ইত্যাদি।
উপরোক্ত সূচকগুলো টারশিয়ারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত সকল হাসপাতালের জন্য উপযুক্ততা অনুসারে বিন্যাস করা হয়েছে। প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা নিরূপনের জন্য হাসপাতাল জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে উর্দ্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটি চেকলিস্টের মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শন কর Onsite Monitoring Tool এর মাধ্যমে আলাদা নাম্বার প্রদান করবেন। স্কোরিং সিস্টেমে প্রাপ্ত নাম্বার ও Onsite Monitoring থেকে প্রাপ্ত নাম্বারের ভিত্তিতে মাসিক পুরস্কারের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। প্রত্যেকটি প্রাশাসনিক বিভাগের জন্য পৃথকভাবে এসব পুরস্কার বরাদ্দ থাকবে এবং বিভাগীয় পরিচালকগণ সেগুলো প্রদান করবেন। মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহের ক্ষেত্রে HSS সেল কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে পুরস্কারের জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে।
এবছরের মাঝামাঝি সময়ে স্কোরের ভিত্তিতে বাছাইকৃত (short listed) প্রতিষ্ঠানসমূহে নিরপেক্ষ টিমের মাধ্যমে জরীপ এবং রোগীর মতামত যাচাই করে সব স্কোর একত্রিত করে একটি জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত ফলাফল নির্দ্ধারন করা হবে।
এবারই প্রথম শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান এর স্কোর ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের কর্মকান্ড যেমন ইপিআই কার্যক্রম, প্রসূতি সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম ইত্যাদির উপরেও আলাদা স্কোর সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে Community Health Service ক্যাটেগরিতে সেরা উপজেলাগুলোকে পুরষ্কৃত করা হবে। এই ক্যাটেগরির কয়েকটি সূচকের নাম নিম্নরূপঃ
Skilled Birth Attendant Delivery Rate, Vit-A Coverage, Fully Vaccinated Child rate, Pregnant Mother Registration Rate, MMR Target achievement, Under 5 children stunting reduction rate, Still Birth rate ইত্যাদি।
আশা করা যাচ্ছে নতুন এই টুলটির মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন সরাসরি দৃশ্যমান করতে পারবো এবং এ্টি ব্যাবহার করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকগণ আরো দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। এই টুলটি সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করার জন্য একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে যেটি এই লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করা যাবেঃ http://bit.ly/2mOsUX5
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদারকরণ প্রকল্পের অনলাইন স্কোরিং টুল এর লিংকঃ http://103.247.238.81/webportal/pages/hss_menu_facility.php
জানুয়ারী ২০১৭তে HSS স্কোরিং সিস্টেমে সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম নিম্নরূপঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সঃ Kaliganj Upazila Health Complex, Jhenaidah
জেলা হাসপাতালঃ Chuadanga District Hospital, Chuadanga
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ Shaheed Ziaur Rahman Medical College Hospital, Bogra, Bogra
বিশেষায়িত হাসপাতালঃ National Institute of Neuro Sciences & Hospital (NINS & H), Dhaka
তথ্য ও ছবি : ডা. মোঃ মারুফুর রহমান,মেডিকেল অফিসার
এম আই এস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
While Bangladeshis are destroying their own facilities and health infrastructures. What a paradox!
ধন্যবাদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে