স্মৃতির মণিকোঠায়… DDC-18

ডিডিসি-১৮তখন ডেন্টাল কলেজ মানেই মেডিকেল ওপিডির ৩ তালা। আর শিক্ষক মানেই মাস্তানা স্যার। থাকতেন আজিম পুর কলোনী। আসতেন ভক্সহল গাড়ীতে নিজে ড্রাইভ করে। মাস্তানা স্যারের আসল নাম আবু হায়দর সাজেদুর রহমান-এএইচএস রহমান। বাড়ী বগুড়া জয়পুর হাট মুহকুমা-থানার হারুণজা গ্রামে। পিতা জসিমউদ্দীণ ছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টর। মাস্তানা নামটা ছাত্রদের দেওয়া আদুরে নাম। তিনি খুব আমুদে ছিলেন। নানা ক্যারিকেচার, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নত’ন-কুদ’ন ও কৌতুকে মজলিস জমিয়ে রাখতেন। তাই ছাত্ররা মাস্তানা ভাই (ফিলোসফিক ম্যাড)বলে ডাকা শুরু করে। সেই থেকে………। জুনিয়র তো বটেই, সিনিয়র (একাডেমিক ব্যাচ হিসাবে তার সিনিয়র কেউ ছিল না) ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন পরম শ্রদ্ধার সম্মানিত মাস্তানা ভাই। ম্যাট্রিক-আইএসসির রেজাল্ট অত্যন্ত ব্রাইট, ক্যালকাটা ইউনিভাসি’টির অধিভুক্ত পরীক্ষায়। অংকে লেটার মাক’ ছিল (সে আমলে)। কোলকাতায় ভতি হলেও চলে আসতে হয় ঢাকা মেডিকেলে দেশ স্বাধীনের কারণে। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নাচ, গান-বাজনা, ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখা ইত্যাদী। ছাত্র জীবণেই তিনি পড়াশুনা ফেলে এই সব নিয়ে মেতে উঠলেন। আজকের যত নামকরা নত’ক-নত’কী, সব তার বংশধর – লায়লা হাসানের সাগরেদ। আর লায়লা কে হাতে ধরে আধুনিক নাচ-ধ্রুপদি শেখান মাস্তানা স্যার। পূব’ পাকিস্তানে সেই থেকে শুরু হলো ধ্রুপদি নাচ। তিনি অতি সুন্দর সাবলীল এবং শুদ্ধ ভাবে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। তিনি একজন নামকরা গীতিকারও ছিলেন। রেডিও-সিনেমায় তার লেখা শতাধিক গান আছে সাবিনা-শাহনাজের গাওয়া। তার এক ভাতিজা তার বাসায় থাকতেন। গানের তালিম নিতেন। এক সময় তিনি প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে শীষে’ আরোহণ করেন। নাম খুরশীদ আলম। “কুয়াশা” ছদ্মনামে লিখতেন ডিটেকটিভ উপন্যাস – ভাইপার সিরিজ; রক্তলোভী ভাইপার, ভাইপারের মরণ ছোবল ইত্যাদী। পূব’ পাকিস্তানে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় যে এত প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে পারে, অনুমান করা অতিসহজ মাস্তানা স্যার একজন অসাধারন ব্যক্তিত্ব।


হলে কী হবে! উনি সাময়িক চটুল এবং বেফজুল কাজে নিজেকে এমন ব্যতিব্যস্ত করে ফেললেন যে আপন পেশাগত শিক্ষার প্রতি আন্তরিক হতে পারলেন না। এ যেন ‘‘আসল সোনা ছাড়িয়া সে নেই নকল সোনা’’র মত অবস্থা। তাই এমবি পাশ করতে দ্বিগুনেরও বেশী সময় লেগে যায়।
এমবি পাশ করার পর ঘণীভয়ত বিডি পড়তে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি যমানোর পূব’ মূহুতে’ কাজী আনোয়ার হোসেন (পাকিস্তানের শীষ’ দাবাড়ু ও ঢাবির স্ট্যাটিষ্টিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ছেলে) মাস্তানা স্যারের ছদ্মনাম “কুয়াশা’’ ব্যবহারের অনুমতি প্রাথ’না করেন। স্যার অনুমতি দিয়ে দেন। এর পর কুয়াশা নাম নিয়ে আনোয়ার মাসুদ রাণা সিরিজ (এক ইংরেজী ডিটেকটিভ সিরিজের বাঙালী ধাচের অনুবাদ) লেখা শুরু করেন।
মাস্তানা স্যার আর উপন্যাস লেখেন নি, ডেন্টালের বই লেখা শুরু করেন। তার লেখা এসদিএম ও প্রস্থোডন্টিক্সের বই এখনো অনেক ডেন্টাল কলেজের শিক্ষক ছাত্রের কাছে সমাদৃত।
মুদ্রার এ পিঠ যেমন আছে তেমন ও পিঠও আছে। মাস্তানা স্যার নিপীড়নমূলক আচরণ, পক্ষপাতিত্ব, অমানবিক ও অশালীন শাব্দিক ব্যবহার(গালিগালাজ)ও যাচাই না করে কান কথায় প্রতিশোধ পরায়ণতা হওয়া ইত্যাদী দোষে দুষ্ট ছিলেন। সেই সাথে ব্যক্তিগত (চেহারা-সুরত, পোষাক ইত্যাদি) আক্রমন করতেন বেশী। ঘটনা প্রবাহে কিঞ্চিত আলোচনা করা সম্ভব হবে।
[চ ল মা ন]

 

লিখেছেনঃ Abul Kalam Joarder

ডক্টরস ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ থেকে বলছি ...

Thu May 22 , 2014
ঘটনাস্থল নোমেক ইমার্জেন্সী এবং শিশু ওয়ার্ড। সময় রাত পৌনে আটটা । ইমার্জেন্সীতে আট বছরের এক শিশু ভর্তি হল ।অবস্থা মূমুর্ষু ।অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক (OPC) খেয়ে এসেছে ।একঘন্টা পার হয়ে গেছে আনতে ।সাথে শুধু বাচ্চার মা আর মামা ।ইমার্জেন্সীতে ডিউটি ডাক্তার যত দ্রুত সম্ভব রোগীর Resuscitation এর ব্যবস্থা করলেন । প্রাইমারি […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo