কুরবানির ঈদে পেশাদার – অপেশাদার অনেকেই পশু জবাই ও মাংস কাটতে ব্যস্ত হয়ে যান। তাড়াহুড়ায় বা অসতর্কতায় ছুরি পশুর চামড়া, মাংস ফসকে গিয়ে হাত কেটে যায়। অনেক সময় আঘাত গুরুতর হয়।
কী করণীয় ?
১। পেশাদার রা ছাড়া যারা কাজে হাত দিয়েছেন, ধারালো ছুরি ইত্যাদি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও মুহূর্তের অসতর্কতায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
ক্লান্তি লাগলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিন।
২। পেশাদারেরা সময় বাঁচাতে তাড়াহুড়ায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। তাঁদের আশ্বস্ত করুন। তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করুন।
৩। বাচ্চাদের আগ্রহ থাকে পুরো কর্মকাণ্ড দেখার জন্য। তাদের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যেন দেখে তা নিশ্চিত করুন।
৪। অনেক সময় কাজের চাপে বা অন্য কোনো কারণে কেউ কেউ মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। সবার হাতে ধারালো অস্ত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
তাই অল্প উত্তেজনা দ্রুত প্রশমন করুন।
৫। যদি হাতে বা অন্য কোথাও দুর্ঘটনা বশত আঘাত পেয়েই যান কেউ, প্রথমেই রক্তপাত বন্ধ করতে স্টেরাইল গজ (নিকটস্থ ওষুধের দোকানে পাবেন) দিয়ে অথবা ধোয়া শুকনা কাপড়ে কাটাস্থান চেপে ধরুন। (তুলা ব্যবহার করবেন না) দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
৬। হাতের বা আঙ্গুলের আঘাত গুরুতর বিবেচনা করতে হবে। কারণ সঠিক চিকিৎসা না হলে চিরতরে আঙ্গুলের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা ও পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পালন করুন।
৭। হাড়ের ছোট টুকরা বা রক্ত ছিটকে চোখে পড়ে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাচ্চাদের এসব স্থান থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
৮। আঘাতে হাত বা হাতের অংশ কেটে আলগা হয়ে পড়ে গেলে ক্ষতস্থান উপরের নির্দেশনা মত রক্তপাত বন্ধে চেপে ধরুন। কেটে পড়া অংশ নরমাল স্যালাইনে (ওষুধের দোকানে পাবেন) অথবা বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে নিয়ে স্টেরাইল গজ বা ধোয়া কাপড় ভিজিয়ে পেঁচিয়ে পরিষ্কার পলিথিনে রাখুন। পলিথিনের মুখ বেঁধে দিন। ভেতরে যেন বাতাস না থাকে। আরেকটি পলিথিনে পানি ও বরফ দিয়ে তার মধ্যে এই পলিথিন টি রাখুন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
৯। সরকারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা অব্যাহত থাকে। সঠিক চিকিৎসা পেতে সেখানেই যান। গুরুতর বিবেচনায় বেশি জরুরি রোগীর চিকিৎসা আগে করা হয়। তুলনামূলক স্থিতিশীল রোগী হলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। বিশৃঙ্খলার জন্যে সময় নষ্ট হয় এবং চিকিৎসা পেতে দেরি হয়। যে কেউ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবেন, অন্যান্য রোগীর স্বজনরা তাঁকে বুঝিয়ে শান্ত করুন। ডাক্তার বা অন্যান্য মেডিকেল স্টাফদের সময় যেন নষ্ট না হয় খেয়াল রাখুন। জরুরি রোগীর প্রয়োজনে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন এবং নাম লিপিবদ্ধ হলে নির্দেশনা মত অপেক্ষা করুন। জানবেন, কেউই বসে নেই এবং সেবাদানকারী আপনাদের সেবায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
১০। কারো কারো জরুরিভাবে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর সাথে যারা যাবেন, রক্তদান করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যান। যদি আপনার রোগীর রক্ত প্রয়োজন না হয়, তাহলে অন্য রোগীর রক্ত দরকার আছে কিনা খোঁজ নিন এবং রক্তদান করে আসুন। অনেক অসহায় রোগী দুর্ঘটনায় পড়ে রক্তের অভাবে চিকিৎসা করতে পারে না এবং মারা যায়। ঈদের দিনে রক্তদানের মত এমন পরোপকারের সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
ঈদের ছুটিতে লোকবল কম থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এদেশের মানুষ নিজেদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতাল গুলো কে রোগী বান্ধব করে তুলবেন এবং হাসপাতাল আক্রান্ত হতে দিবেন না, এটাই কাম্য।
ঈদ হোক দুর্ঘটনা বিহীন, আনন্দময়। হাসপাতাল গুলো হোক বরাবরের মতই স্বমহিমায় উজ্জ্বল, রাতদিন ২৪ ঘন্টা, আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতায়।
ঈদ মুবারক।
“প্ল্যাটফর্ম ডেস্ক”