সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
কুমিল্লায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতারণার ঘটনাকে ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ নামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসার বিষয়ে নয় বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতারণার বিরুদ্ধে।
রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেও মিলেছে এর সত্যতা। তাদের একজন প্ল্যাটফর্মকে জানান, ‘রোগী আইসিইউতে মারা যাওয়ার পরও সে জীবিত আছে বলে দুইবার প্রায় ২৭ হাজার টাকার ওষুধ নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর মৃত্যুর পরও দেখতে না দিয়ে রোগী বেঁচে আছে বলে জানিয়ে আরও প্রায় তিন লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নেয়।’

এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়ের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় ‘কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার’ নামের বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতারণার খবর শুনে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী হাসপাতালে ভাংচুর চালিয়েছে। গতকাল রবিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর প্রথমে পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আতঙ্কে হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে নিয়ে যান স্বজনেরা।
জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা ইমরান হোসেন (২১) নামের এক তরুণকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত ইমরান হোসেন কুমিল্লা নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার দুবাইপ্রবাসী হুমায়ুন মিয়ার ছেলে।

অবশ্য ঘটনা পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে একটি গোপনকক্ষে কুমিল্লা মহানগরের এক রাজনৈতিক দলের নেতার মাধ্যমে চার লাখ টাকায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার হাসপাতাল। সমঝোতাপত্রে অভিযুক্ত দুই নেতার স্বাক্ষরসহ একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নিহত ইমরান হোসেনের চাচা প্ল্যাটফর্মকে বলেন, ‘সম্প্রতি ইমরান হোসেনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। গত বুধবার তাঁকে ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ইমরানের অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে চিকিৎসক বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বলেন, রোগীর অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাঁকে আইসিইউতে নিতে হবে। এই বলে ইমরানকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আমরা বারবার চেষ্টা করলেও আমাদের খুব বেশি রোগীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হতো না। সর্বশেষ রোববার বিকেলে অনেক কষ্টে আমি আইসিইউতে গিয়ে দেখি—রোগীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। তখনই আমার মনে হয়েছে, ইমরান আর বেঁচে নেই। এরপর আমরা চিৎকার করলে সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা বলেন, রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। এরপর তাঁরা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যান। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি।’
জাকির হোসেন আরো বলেন, ‘ভাতিজার চিকিৎসার পেছনে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছিল, অপারেশন খরচ ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। যখন ভর্তি করি, তখন বলেছিল, ঢাকা থেকে বড় সার্জন এসে অপারেশন করবে, কিন্তু তারা কুমিল্লা ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করিয়েছে। তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’
সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া নাম্বারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, ‘রোগীর বড় ধরনের সমস্যা ছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর জন্য। এখানে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা নেই।’
প্রতারণার বিষয়ে এবং সমঝোতার বিষয়ে জিগ্যেস করা হলে কোন ধরনের মন্তব্য করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস