হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ই এপ্রিল, ২০২০ডা.জাহিদুর রহমান, ভাইরোলজিস্ট

একটা হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে কম কার্যকর, সবচেয়ে কম নির্ভরযোগ্য অথচ সবচে ব্যয়বহুল ধাপটি হল পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)। যেটি নিয়ে আমাদের সবচে বেশি মাতামাতি। সবাইকে একটা করে পিপিই ধরিয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ! অথচ আমরা যদি এর উপরের ধাপের কাজগুলো ঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে কিন্তু পিপিইর উপরে এতটা নির্ভর করতে হয় না।

সবচেয়ে কার্যকর, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে কম খরচের ধাপটি হচ্ছে “Elimination”। অর্থাৎ জীবাণুটিকে আমি আমার হাসপাতালে প্রবেশই করতে দিব না বা করলেও সরিয়ে ফেলব। কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে এই ধাপে করণীয় হচ্ছে আইসোলেশন। হাসপাতালে কোভিড-১৯ এর কোন রোগী প্রবেশের সাথে সাথে তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলব মানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করব। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এই ধাপটিতে ৯৯% ব্যর্থ হয়েছি এবং হচ্ছি।

এর পরের ধাপটি হচ্ছে, “Engineering Controls”, অর্থাৎ হাসপাতালের কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা লাগবে। উদাহরণ হিসেবে হাসপাতালের মূল ফটকে প্রবেশকারীদের শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেটা না পারলেও শরীরের তাপমাত্রা দেখে প্রবেশ করানো, হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। দরজাগুলো এমনভাবে বানানো যেতে পারে যাতে হাত দিয়ে ধরে খোলা না লাগে। বিভিন্ন পয়েন্টে মেডিকেল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু পেপার রাখা যেতে পারে। আইসোলেশন ওয়ার্ডটি যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে।

এর পরের ধাপটি “Administrative Controls”, এই ধাপে কর্মরত সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিতে হবে। হাসপাতালের প্রবেশ থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশিকাসহ পোস্টার, বিভিন্ন কর্মকান্ডের এসওপি, কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক মনিটরিং, বারবার ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করানো। সব পর্যায়ের স্টাফদের হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ভিতরেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, এমনভাবে তাদের ডিউটি রোস্টার করা যাতে এক সাথে বেশি সংখ্যক স্টাফ সংক্রমণের ঝুঁকিতে না পড়ে, আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ডিউটি রোস্টার করা, সেখানের সবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পিপিই সরবারহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি। হাসপাতালে ব্যবহার করার জন্য পিপিই এবং Hexisol পকেটে করে বাসায় নিয়ে না যাওয়াটাও এই ধাপে পড়ে।

আর সর্বশেষ ধাপ হল পিপিই। যেটির উপর ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সবাই মোটামুটি বিশেষজ্ঞ হয়ে গিয়েছেন। তবে জেনে রাখুন N 95 আর মেডিক্যাল/সার্জিক্যাল মাস্কের নামে আমাদের যে ছাইপাশ দেয়া হচ্ছে সেগুলো সান্ত্বনা দিতে পারে, সুরক্ষা না।

আপনিই বলতে পারবেন আপনার হাসপাতালের প্রকৃত অবস্থা কি। তাই শুধু পিপিপি, পিপিপি, পিপিপি না করে অন্যান্য বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিই। আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্তের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগই হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট, ইত্যাদি), যেটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। হাসপাতাল সুরক্ষিত না থাকলে রোগি, ডাক্তার, সমাজ কেউই ভালো থাকবেন না। আসুন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করি। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় কাউকে দিয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় যদি দরজার হাতলগুলোও জীবাণুমুক্ত করানো যায়, এটাও ইনফেকশন কন্ট্রোলের অংশ।

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

"স্মৃতিতে প্রিয় মঈন উদ্দিন স্যার"- ডা. জোবায়ের আহমেদ

Wed Apr 15 , 2020
লেখা: ডা. জোবায়ের আহমেদ বুধবার, ১৫ই এপ্রিল, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ আজকের সকালটা এত ভারী হবে,এতটা কষ্ট ও বুকফাটা আর্তনাদে আমার হৃদয় বিগলিত হবে ভাবিনি। তবে আমি কেমন যেন প্রস্তুত ছিলাম। কিন্ত আজই এমন খবরে আমার চোখ ভিজে যাবে ভাবিনি। অনেক কষ্ট হচ্ছে। চিৎকার করে কান্না আসছে। আমাদের প্রিয়জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo