প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার
লেখাঃ ডা. আসির মোসাদ্দেক সাকিব
কষ্টে হৃদয় ভেঙেছে- এমন কথা বলা শুনলে এটাকে রূপক ভাবার প্রয়োজন নেই। হৃদয় ভাঙা একটি সত্যি মেডিকেলিয় ঘটনা। এটাকে broken heart syndrome বলে সাধারণ ইংরেজিতে। সুনির্দিষ্টভাবে ডাক্তারি ভাষায় এটাকে বলা হয় Stress cardiomyopathy। জাপানীরা একটু আলাদা ভাবে উচ্চারণ করে এই রোগকে। এই রোগের ফলে হৃদপিণ্ড দেখতে বোতলে আটকে পড়া অক্টোপাসের মতো হয়ে যায় তাই জাপানে একে takotsubo syndrome বলে। তাকোতসুবো মানে অক্টোপাস। এবারে আসি এই রোগে আসলে ভেতরে কী জিনিস ঘটে?
এই হৃদয় ভাঙা আসলে কীভাবে হয় সেটা ১০০% নিশ্চিত হতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। ওনারা তিন ধরনের ম্যাকানিজমের প্রস্তাব করেছেন। এগুলোর ভেতরে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যটা একটু ব্যখ্যা করি।
আমরা খুব মানসিক কষ্ট পেলে আমাদের স্নায়ু ও মস্তিষ্ক থেকে কিছু ক্যামিকেল বের হয়, ডাক্তারি ভাষায় এগুলোকে ক্যাটিকোলামিন বলে। এই ক্যাটিকোলামিন দুই ধাপে বের হয়। প্রথম ধাপে বের হয়ে হৃদপিণ্ডের মাংশপেশীকে দুর্বল করে ফেলে ফলে এটা রক্ত সাপ্লাই দিতে পারেনা ঠিক মতো। দ্বিতীয় ধাপের বের হলে সেগুলো আমাদের শরীরের ধমনী গুলোকে সংকুচিত করে ফেলে। এর ফলে প্রেশার বেড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য ধমনীর মতো হৃদপিণ্ডের নিজস্ব ধমনী আছে যাকে করোনারী ধমনী বলে। এই করোনারী ধমনীও সংকুচিত হয়ে যাবার ফলে হৃদপিণ্ড নিজেই টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত পায়না। তখন সে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। এই কারণে হার্ট এটাকের মতো প্রচন্ড বুকে ব্যথা হয়। হার্টের ECG করলেও এটাকে হার্ট এটাক বলেই মনে হয়, যদিও এটা প্রকৃত হার্ট এটাক নয়। অবস্থাটা দীর্ঘস্থায়ী হলে হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ মাংসপেশি ছিঁড়ে যায়। তাই একে সুন্দর ভাষায় ছেঁড়া বা ভগ্ন হৃদয় বলা হয়।
এই হৃদয় ভাঙার রোগটা মাঝবয়েসী মেয়েদেরই বেশি হয়। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা ১০-১৫ দিন পরে নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায় তবু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। পৃথিবীতে মোট হার্ট এটাক সন্দেহের রোগীর ভেতরে ৩% হলো এই হৃদয় ভাঙার রোগী। এই রোগ হয় একমাত্র প্রেম ঘটিত বিরহ, প্রিয়জনের মৃত্যু, প্রচন্ড হতাশা ইত্যাদি কারণে।