সেরোটোনিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা স্বাভাবিক পরিমাণে থাকলে মানসিক সুখানুভূতি একটি ভারসাম্য অবস্থায় থাকে। আর তাই একে হ্যাপি কেমিকেল বলা হয়।
সেরোটোনিন উৎপাদন
আমরা যে প্রোটিন খাই, তাতে আটটি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড রয়েছে, যার একটি হলো ট্রিপ্টোফ্যান। ডিম, মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদিতে Trytophan পাওয়া যায়। প্রোটিন খাবার গুলি অন্ত্রে গিয়ে ভেঙে ট্রিপ্টোফ্যান তৈরী করে। এই ট্রিপ্টোফ্যান আবার ভিটামিন এ1 (থায়ামিন), ফলিক এসিড, ভিটামিন বি12, জিংক ইত্যাদির সহায়তায় সেরোটোনিন তৈরি করে। শরীরের মোট সেরোটোনিন এর ৯০% অন্ত্রে তৈরী হয়।
সেরোটোনিনের কাজ
১. পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করা। সেরোটোনিন অন্ত্রের সংকোচন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাভাবিক পেরিস্টালসিস বজায় রেখে Bowel habit স্বাভাবিক রাখে।
২. নার্ভ সিগন্যাল পেরিফেরি থেকে সেন্ট্রালে পাঠানো। হাইপোথ্যালামাসকে স্টিমুলেট করার মাধ্যমে সেরোটোনিন আমাদের শরীরে Mood Stabilizer কেমিক্যাল হিসাবে কাজ করে। এই সেরোটোনিন আমাদের মানসিক প্রশান্তির নিয়ন্ত্রক। আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে যেকোনো দুঃখ কষ্টের সময় ভারসাম্যপূর্ণ মানসিক অবস্থা বজায় রাখতে এই সেরোটোনিন ডোপামিনের সাথে মিলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে প্রতিটি ফরেন পার্টিকেলের বিরুদ্ধে যেভাবে এক প্রকার ডিফেন্স মেকানিজম চালু রয়েছে, যেমন Immuunoglobuline সমূহ ডিফেন্স মেকানিজম হিসাবে কাজ করে, ঠিক তদ্রুপ আমাদের মানসিক অবস্থাকে বাহ্যিক ডিপ্রেশন, হতাশা, ইত্যাদি থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ডিফেন্স মেকানিজম বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে সেরোটোনিন।
৩। স্বাভাবিক ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা এবং সকালবেলা ঘুম থেকে জাগতে সাহায্য করে।
সেরোটোনিন কমে যাবার প্রভাব
১। পরিপাক ক্ষমতা কমে যাবে, কারণ সেরোটোনিনের প্রধান কাজ সমূহের একটি হচ্ছে পরিপাকে সাহায্য করা। এবং Irritable bowel syndrom দেখা দিবে। এতে করে ডায়রিয়া, কোষ্টকাঠিন্ন, পেটে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
২। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রভাবে সেরোটোনিনের পরিমাণ কমে যায়। তখন মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা ইত্যাদি দেখা যায়। তাই ডিপ্রেসিভ রোগীদের কিংবা Mood disorder এর রোগীদের চিকিৎসায় SSRI দেওয়া হয়, যা Circulatory সেরোটোনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ডিপ্রেশনের সময় যেহেতু সেরোটোনিনের পরিমান কমে যায়, তাই তাদের Associate symptoms হিসাবে Anorexia, Diarrhoea, constipation দেখা দেয়।
৩। ইনসমনিয়া ডেভেলপ করে, আর সকাল বেলায় জাগ্রত হতে সমস্যা হয়। ডিপ্রেশনের পেশেন্ট দের যেহেতু সেরোটোনিন এর পরিমাণ কম থাকে, তাই তাদের রাত্রে ঘুম হয় না, ইনসমনিয়া থাকে, আর সকাল বেলায় ঘুম বেড়ে যায়। এ ধরনের রোগীদেরও তাই SSRI দেওয়া হয়।
সেরোটোনিন লেভেল কমে গেলে SSRI drugs দেওয়া হয়, তবে SSRI এর কারণে সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে, তখন আবার সেরোটোনিন সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। তাই SSRI প্রেসক্রাইব করার সময় রোগীর অবস্থা দেখে নিতে হবে। সেরোটোনিন সিন্ড্রোম এর কারণে সেক্সুয়াল ডিসফাংশন দেখা দেয়। তাই সবসময় ডিপ্রেশন আর সেরোটোনিন এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য টেনশন মুক্ত থাকবে, আর সেরোটোনিন সম্পৃক্ত খাবার তথা যেসব খাবার খেলে প্রাকৃতিকভাবে সেরোটোনিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তা বেশি করে খাওয়া উচিৎ।
ডা. ইসমাইল আযহারি
DCMC/2013-14
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর
ভাল আর্টিকেল।
একটু সংশোধন করে নেবেন:*ভিটামিন বি১(থায়ামিন)।