বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪
তত্বাবধায়ক সরকার আমলে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হলেও গত ১৬ বছরেও নিজস্ব হাসপাতাল পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে দেশের মেডিকেল কলেজের অনুমোদেনের সাথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তার পার্শ্বেই মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়নে ২৬ দশমিক ৫৩ একর জায়গায় নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৮ সালের অক্টোবরে ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে এ কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয় একাডেমিক ভবন নির্মান। ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ছাত্র এবং একটি ছাত্রী হোষ্টেল নির্মান করা হয়। কিন্তু এখনো হয়নি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফলে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ৮০ লক্ষাধিক মানুষ।
নিজস্ব হাসপাতাল না থাকায় এখনও শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ক্লাসের জন্য দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। এতে শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে সালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ কম্পাউন্ডে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (পূর্বের আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। একই বছরে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের নথি থেকে জানা যায়, ভারতীয় ঋণ প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের কথা থাকলেও ২০২২ সালে তা বাতিল হয়। উল্লেখ্য যে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ (পূর্বের আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল) মোট ৪ টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ২০১৮ সালের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৬৬৩ কোটি ৩২ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ ছিল ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মাত্র ০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে অবকাঠামোগত অগ্রগতি শূন্য থাকার পাশাপাশি ঋণে ভারতের শর্ত পূরণ না হওয়ায় ভারত ঋণ দেয় নি।
২০২২ সালে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের উপ-প্রধান (স্বাস্থ্য উইং) ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, “প্রকল্পটি সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ঋণে ভারতের কিছু শর্ত ছিল, সেটা পূরণ হয়নি। প্রকল্পটি এখন সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবনা নিয়ে সামনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে।”
পরবর্তীতে গত ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (পূর্বের আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল) অনুমোদন করা হয়। একই সাথে চারটি জেলায় (যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও নোয়াখালী) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের পাশাপাশি বাজেটও বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকের এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির প্রেক্ষিতে অনুমোদন পাওয়ার পরপরই নোয়াখালীতে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (পূর্বের আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল) ১০ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু চিঠিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের বন্ধের বিষয়ে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। একনেকে অনুমোদন পাওয়া চার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে শুধুমাত্র পাবনায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী