বর্তমান বিশ্বে মনে করা হয় হৃদরোগ এবং ক্যান্সার মৃত্যুর প্রধান কারণ। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর মতে COPD ( ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ) অন্যতম একটি রোগ যা আগামী ২০২০ সালের মধ্যেই মৃত্যুর তৃতীয় কারণ হবে।
সাধারণত শ্বসনতন্ত্রের কতগুলো রোগের সমষ্টি কে COPD বলা হয়ে থাকে যেমন ক্রোনিক ব্রঙ্কাইটিস, এম্ফাইসেমা ইত্যাদি। শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘদিন কাশি, বুকে ব্যাথা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কফ, কাশি থাকে এবং ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কাশির সাথে অল্প অল্প মিশ্রিত কফ যায়।
সাধারণত ধূমপানকেই COPD এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেন গবেষকরা। যে যত বেশি মাত্রায় এবং বেশিদিন ধরে ধূমপান করবে, তার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি। ধূমপানের মাঝেও আবার কিছু ব্যাপার রয়েছে, যা এ রোগের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়; যেমন সিগারেটের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে নেয়া, একটি সিগারেটকে বার বার টানতে থাকা, জ্বলন্ত সিগারেটটি হাতের আঙুলের ফাঁকে না রেখে ঠোঁটের মধ্যে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহণ করা, নেভানো সিগারেট পুনরায় জ্বালিয়ে খাওয়া এবং সিগারেট খেতে খেতে একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে খাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া শ্বসনতন্ত্রের অন্যান্য রোগের কারণে ও COPD হতে পারে। COPD আক্রান্ত এক চতুর্থাংশ মানুষ যারা ধূমপায়ী নন বা সারা জীবন ধূমপান না করে নি তারা ও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর তা হতে পারে গাড়ির কালো ধোঁয়া বা মিল-কারখানার কালো ধোঁয়া। শহরের বিষাক্ত ধোঁয়া ক্যান্সার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এছাড়া ও শ্বসনতন্ত্রের অন্যান্য রোগ এবং বংশগত কারণে ও COPD তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০ জন COPD আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৮ জনেরই প্রধান কারণ হয় ধূমপান।
WHO এর মতে বর্তমানে পৃথিবীতে ৭০ মিলিয়ন মানুষ COPD তে আক্রান্ত এবং ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় আমেরিকায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ অ্যাজমায় আক্রান্ত, যার মধ্যে ১৪.৮ মিলিয়ন মানুষই COPD তে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সিগারেট ও বিড়ি। প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে শুধু ধূমপানের জন্য। বিরাট অঙ্কের এ অর্থ সম্পূর্ণই মানবদেহে কুফল বয়ে আনে। এই ধূমপায়ী সব মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে COPD সহ বিভিন্ন জটিল বক্ষব্যাধিতে। এসব রোগে প্রতি ১৩ সেকেন্ডে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে পুরুষ ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি এবং মহিলা ধূমপায়ীর সংখ্যা অন্তত ৬০ লাখ। এ সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে একটা চিন্তার কারণ। মনে রাখতে হবে- যারা ধূমপান করেন, তাদের আশপাশে যারা থাকেন তারাও ধোঁয়ায় আক্রান্ত হন সমানভাবে। এ হিসাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধূমপানের কারণে রোগব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৭ কোটি মানুষ। একবার এ ঘাতক ব্যাধিটি দেখা দিলে চিকিৎসা ধীরে ধীরে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কারণ সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে যে সময়ের প্রয়োজন পড়ে, সে সময়ের মাঝে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাই এ প্রতিরোধযোগ্য ঘাতক ব্যাধিটি সম্বন্ধে আজই সতর্ক ও সচেতন হোন। ধূমপান বর্জন করুন।
References :
https://www.healthypeople.gov/2020/topics-objectives/topic/Respiratory-Diseases/objectives#5164
http://www.nhlbi.nih.gov/guidelines/asthma
http://wonder.cdc.gov/cmf-icd10.html
কৃতজ্ঞতাঃ
Dr. Krishna Chandra Ganguly
Head of Medicine & Chest Disease
Impulse Medical College & Hospital
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার
Tahrim Mojumder (Ayesha)
Brahmanbaria Medical College
Session :2015-16