প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২ জুলাই, ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. মো. মারুফ হক খান
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
লেকচারার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাঁধা পেলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক!
৩৮ তম বিসিএসের নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত সকলকে অভিন্দন। ৩৮ তম বিসিএস ফলাফলে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জেনারেল ক্যাডারের একটি বড় অংশ চিকিৎসক, ইন্জিনিয়ার ও কৃষিবিদের আধিক্য দেখা গেছে, আমাদের দেশে অনাকাঙ্খিতভাবে এটাই হবে তা সহজে অনুমান করা যাচ্ছিল। ক্যাডার ভিত্তিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যই মূল কারণ বলে মনে করি। একজন চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্য ক্যাডারের হতাশার কথা কিছুটা বলতে পারি। একজন শিক্ষার্থী যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়, তখন তার স্বপ্ন থাকে – একজন চিকিৎসক হবে। জীবনের মহামূল্যবান সময় কেবলমাত্র চিকিৎসা শিক্ষায় ব্যয় করে, চূড়ান্তভাবে চিকিৎসক হয়ে; কেউই শখ করে পেশা বদল করতে চায় না বা বিদেশে পাড়ি জমাতে চায় না।
সেই বিসিএস নিয়োগ পেয়ে একজন চিকিৎসক নবম গ্রেডের সুযোগ সুবিধা নিয়ে যখন তার কর্মস্থলে একটি বসার চেয়ার, চিকিৎসা প্রদানের জন্য অত্যাবশকীয় যন্ত্রপাতি, যথাযথ সম্মান পায় না, তখন থেকেই তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা ভর করে! আর কর্তব্যরত অবস্থায় শারীরিকভাবে আক্রমণের কথা নাই বললাম! এছাড়াও এমবিবিএস পাস করে সরকারি চাকরিতে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করে ৩০ বছর চাকরির পরও তাদের অনেককে মেডিকেল অফিসার হিসেবেই অবসরে যেতে হয়। উচ্চতর (স্নাতোকোত্তর) ডিগ্রি অর্জন না করলে পদোন্নতি পাওয়া যায়না। এমনকি দিনরাত কষ্ট করে পড়াশুনা করে ডিগ্রি অর্জন করলেও, সীমিত সংখ্যক পদ থাকায় যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও যথাসময়ে পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই। যেখানে প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহজেই পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে অধ্যাপকগণ গ্রেড-৩ অনুযায়ী বেতন ভাতা ও সুবিধা পেয়ে থাকেন, যেখানে সুপরিকল্পিত ভাবে গ্রেড-১ এর পথ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে! অথচ একজন অধ্যাপককে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার কথা। এরূপ বহু বৈষম্যের জন্যই মেধাবী চিকিৎসক, ইন্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগণ, তাদের অনেক দিনের লালিত স্বপ্নকে পাশে ঠেলে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বা অন্য ক্যাডারে চলে যাচ্ছে।
ক্যাডার বৈষম্য দূর না হলে বা বিচার বিভাগের ন্যায় চিকিৎসা আলাদা কমিশন না হলে, আগামী দিনে আরো অনেক চিকিৎসক দেশ ছেড়ে চলে যাবে, নয়তো জেনারেল ক্যাডারে চলে যাবে- যার ইঙ্গিত সুস্পষ্ট!
ক্যাডার বৈষম্য দূর না হলে চিকিৎসকরা দেশে থেকে সেবা করার আশা ছেড়ে দিবে।