প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০
৪ বছরের শিশু সানজিদা, যে সময়টাতে তার হাসি-খুশিতে ঘর মাতিয়ে রাখার কথা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুটির সে সময়টা কাটসে অসহ্য ব্যথার যন্ত্রণায় কান্না আর আহাজারিতে।
দিশেহারা বাবা-মা অনেক চিকিৎসকের কাছে ঘুরে অবশেষে সন্তানকে নিয়ে শরণাপন্ন হন বিশিষ্ট নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈমের। রোগের ইতিহাস নিয়ে জানা যায়, তিন মাস আগে আঘাত পাওয়ার পর থেকে মুখের ফোলা বাড়তে থাকে সানজিদার। অনেক ডাক্তার দেখানো হলেও এই বয়সে ক্যান্সারের কথা কেউ চিন্তা করেননি। তাই পরীক্ষা করতে দিলে পরেরদিন রিপোর্ট আসে সানজিদার মুখের লালাগ্রন্থিতে (Parotid gland) ক্যান্সার হয়েছে (Mucoepidermoid Carcinoma)। আর সিটি স্ক্যান রিপোর্টে দেখা যায় মুখের ডান পাশে বড় একটি টিউমার, যার জন্য মেজর অপারেশন লাগবে। কিন্তু চলমান করোনা মহামারিতে সকল রুটিন অপারেশন স্থগিত করা হয়েছে।
সানজিদার বাবা জানান,
“আমার মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমার এতো টাকা-পয়সাও নেই। অসহায় হয়ে চিন্তায় যখন কুলকিনারা পাচ্ছিলাম না, তখনই ডা. নাঈম স্যারের আশ্বাস পেয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি করাই মেয়েকে।”
এ ব্যাপারে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অপারেশন টিমের প্রধান ডা. নূরুল হুদা নাঈম বলেন,
“হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমানের সহায়তায় গত ১৪ মে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু সানজিদার মেজর অপারেশন কমান্ডো সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা মুখের পুরো ক্যান্সার ক্লিয়ার করতে সক্ষম হয়েছি। সে এখন সুস্থ আছে।”
অপারেশন টিমের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈমের সাথে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিক, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আজিজুল হক মানিক ও মেডিকেল অফিসার ডা. মানস সিনহা টুটুল। এনেস্থিসিয়াতে ছিলেন ডা. দেবাশীষ। এছাড়া রোগী ব্যবস্থাপনায় অপারেশনের আগে এবং পরে আরও সহযোগিতায় ছিলেন আবাসিক সার্জন ডা. এম নুরুল ইসলাম এবং রেসিডেন্ট ডা. হাসনাত আনোয়ার।
করোনা মহামারীর এই সংকটময় মুহূর্তেও সকল ধরণের নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে দীর্ঘ সময়ের এই অপারেশনটি সম্পন্ন করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা। পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় ও চিকিৎসকদের সহায়তায় সুস্থ হয়ে বাবা-মার কোলে ফিরে গেলো শিশু সানজিদা।