রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে করফা গ্রামে ৫১ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ও সুসজ্জিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আছে সেখানে। প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় সরকারি হাসপাতালটি। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এই কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের পৈতৃক ভিটায় তাঁর বাবার নামে ওই কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে ‘অধ্যাপক শেখ মো. রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র’। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ‘প্রোপার্টি ডেভলপমেন্ট লিমিটেড’ এটি বাস্তবায়ন করে।
কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক। অধ্যাপক শেখ মো. রোকন উদ্দিন আহমেদ ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এখানে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য পদ আছে ১০টি। এর মধ্যে ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ১ জন ফার্মাসিস্ট, ৪ জন পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন অফিস সহকারী ও অফিস সহায়ক ১ জন। এর সব কটি পদ হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকেই শূন্য রয়েছে।
এখানে আছে দুটি তিনতলা ভবন। এর একটি হাসপাতাল ভবন, আরেকটি ডরমিটরি। হাসপাতাল ভবনে রয়েছে পাঁচ শয্যা করে ১০ শয্যার দুটি ওয়ার্ড ও চারটি কেবিন। আছে আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ। সেখানে অন্তঃসত্তা নারীদের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার সব ব্যবস্থা আছে। নরমাল ডেলিভারির জন্য আছে লেবার রুম। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য সুসজ্জিত কক্ষ রয়েছে। আছে আধুনিক আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র। আছে ফার্মেসি ও স্টোর কক্ষ। রোগীদের অপেক্ষার জন্য রয়েছে বিশ্রামাগার ও ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ। মাল্টিপারপাস মিলনায়তনও আছে। আছে বিদ্যুৎ, সৌর প্যানেল ও আধুনিক জেনারেটর।
হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই রোগী আসে। এর মধ্যে নারী রোগীই বেশি। পুরুষ রোগীরাও আসেন সাধারণ চিকিৎসা নিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রহিমা খাতুন এবং অফিস সহায়ক মো. নাসিরউদ্দিনকে এখানে প্রেষণে পাঠানো হয়েছে। আর কোনো কর্মী এখানে নেই। তারা সাধারণত বেশি অসুস্থ রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেখভাল করেন।
লোহাগড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক অবকাঠামো ও উপকরণে সুসজ্জিত এমন হাসপাতাল উপজেলা সদরেও নেই। এক বছর আগে চালু হয় হাসপাতালটি। এ পর্যন্ত এখানে কোনো চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল পদায়ন করা হয়নি। একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন অফিস সহায়ক অন্য ইউনিয়ন থেকে এনে কোনো রকম কাজ চালানো হচ্ছে। তাই এত টাকায় নির্মিত হাসপাতাল থেকে এলাকাবাসী সেবা পাচ্ছেন না। চিকিৎসকসহ অন্য পদগুলো পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী।